গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি (Globocan)-এর তথ্যমতে, যে ক্যান্সারের কারণে বাংলাদেশের নারীদের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে তা হলো স্তন ক্যান্সার।
শুধুমাত্র ২০২০ সালেই বাংলাদেশে ১৩ হাজারের বেশি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং এদের ভেতর প্রায় সাত হাজার নারী স্তন ক্যান্সারের কারণে
মারা যান। পাঁচ বছর ধরে স্তন ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে থাকা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজারেরও বেশি।
স্তনের কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখনই স্তন ক্যান্সার হয়। স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত
ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালির লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন
জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার।
স্তন ক্যান্সার কি শুধুমাত্র নারীদের রোগ?
স্তন ক্যান্সার নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও হতে পারে। নারীদের মতো এত বেশি পরিমাণে না হলেও, আমেরিকার পরিসংখ্যান অনুযায়ী গড়ে
প্রতিবছর ২৫৫,০০০ জন নারী রোগীর বিপরীতে ২৩০০ জন পুরুষ রোগী পাওয়া যায়। তাই পুরুষদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা নারীদের থেকে তুলনামূলক
অনেক কম হলেও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
এবার আমরা শুধুমাত্র নারীদের স্তন ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা করব।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ:
স্তনে বা তার আশেপাশে নতুন কোনো পিণ্ড/ চাকা/দলার মতো গঠন তৈরি হওয়া।
স্তনের বিভিন্ন অংশ পুরু কিংবা ফুলে যেতে থাকা।
স্তনের ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি হওয়া।
নিপল বা স্তনবৃন্তের আশেপাশে বা স্তনের অন্য কোনো জায়গার ত্বকে লাল লাল ভাব হওয়া।
নিপল এলাকায় ব্যথা অনুভব করা।
নিপল দিয়ে দুধ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ নিঃসরিত হওয়া।
স্তনের আকার-আকৃতি পরিবর্তন হওয়া।
স্তনের যেকোনো স্থানে ব্যথা হওয়া।
স্তন ক্যান্সারের ঝুকিতে কারা বেশি থাকেন?
বয়স যত বাড়তে থাকে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বাড়ে। বেশিরভাগ ক্যান্সার ধরা পড়ে ৫০ বছর বয়সের পরে।
বিশেষ জিনগত মিউটেশন হলে।
১২ বছর বয়সের আগেই পিরিয়ড হওয়া এবং ৫৫ বছর বয়সের পরে মেনোপজ বা রজঃনিবৃতি হওয়া।
স্তন পুরু হলে সেখান থেকে টিউমার খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হয়। যার কারণে তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
আগে স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকলে কিংবা ক্যান্সারব্যতীত স্তনের অন্য কোনো রোগ হয়ে থাকলে।
পরিবারের কারোর স্তন কিংবা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হয়ে থাকলে।
রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা নিয়ে থাকলে।
শারীরিকভাবে পরিশ্রমী না হলে।
রজঃনিবৃতির পরে ওজন বাড়তে থাকলে।
বিভিন্ন হরমোন গ্রহণ করলে।
প্রথম গর্ভধারণ ৩০ বছর বয়সের পর হলে এবং দুধপান না করালে।
অ্যালকোহল পান।
যেভাবে আপনি স্তন ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারেন:
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
নিয়মিত ব্যায়াম/ শারীরিক পরিশ্রম।
অ্যালকোহল পান না করা।
জন্মবিরতিকরণ বড়ি খাওয়ার আগে এবং হরমোন থেরাপি নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
যদি আপনার পারিবারিক ইতিহাসে এই ক্যান্সার কারো হয়ে থাকে কিংবা বিশেষ জিনের মিউটেশন ইতিহাস থাকলে চিকিৎসককে জানানো।
চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত স্তন ক্যান্সারের স্ক্রিনিং করলে! এর ফলে আগেই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
স্তন ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা যায় তাহলে পুরোপুরি এর নিরাময় সম্ভব। আর সেজন্য বাড়িতে বসেই
নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা ।
0 comments:
Post a Comment