Saturday, October 1, 2022

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার

 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার


 


বিগত কয়েকদিন যাবত, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলিউড সেলিব্রিটি সোনালি বেন্দ্রের মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার খবর বেরোচ্ছে। সোনালি বেন্দ্রে নিজের টুইটারে হাই-গ্রেড ক্যান্সার (মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার) ধরা পড়ার খবর দিয়েছেন। সাম্প্রতিককালে ইরফান খানের পরে এটা বলিউড সেলিব্রিটির এইধরণের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হবার দ্বিতীয় ঘটনা। এখানে এই গুরুতর রোগের ব্যাপারে কিছু তথ্য দেওয়া হল। 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার কি?

মেডিক্যাল পরিভাষায়, কোন ক্যান্সারের তার উৎসস্থল থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়াকে মেটাস্ট্যাটিক বলা হয়। এই অবস্থাকে ডাক্তাররা ‘মেটাস্ট্যাটাসাইজড’ বলে মনে করেন। এটা “মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার” ও “স্টেজ ৪ ক্যান্সার” নামেও পরিচিত। 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার কীভাবে হয়?

মেটাস্ট্যাসেস হল মেটাস্ট্যাটিকের বহুবচন। প্রধানত, ক্যান্সার কোষ তার উৎসস্থল থেকে ভেঙ্গে বেরিয়ে রক্তস্রোত বা লিম্ফাটিক সিস্টেমে প্রবেশ করলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। লিম্ফাটিক তন্ত্র, সারা শরীরে তরল পদার্থ পরিবহন করে। তাই, মূল জায়গা থেকে ক্যান্সার কোষ অনেকদূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং সেখানে গিয়ে নতুন ক্যান্সার কোষ তৈরি করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বেড়ে উঠতে পারে। 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের জন্য কি কি বিষয় বা কারণ দায়ী?

মেটাস্ট্যাটেসিসের জন্য প্রধানত নিম্নলিখিত কারণগুলি দায়ীঃ

  • ক্যান্সারের ধরণ
  • ক্যান্সার বেড়ে ওঠার প্যাটার্ন বা ছাঁচ (এটা কত দ্রুত ছড়াচ্ছে)
  • চিকিৎসা হবার আগে এটা কতদিন ধরে বেড়েছে
  • অন্যান্য কারণ 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার কোথায় হতে পারে?

১. সাধারণত যেখানে বেড়ে ওঠেঃ প্রায়শই হাড়, মস্তিষ্ক, লিভার, লিম্প নোড ও ফুসফুসে বেড়ে ওঠে।

২. মোটামুটিভাবে যেখানে বেড়ে ওঠেঃ প্লিউরাল জায়গা (ফুসফুসের আশেপাশের আবরণ) বা তলপেটের গহ্বরে বাড়তে পারে। এইসব জায়গায় অতিরিক্ত তরল জমার সম্ভবনা থাকে (এটাকে ম্যালিগনেন্ট প্লিউরাল এফিউশান বা ম্যালিগনেন্ট অ্যাসিটেস বলা হয়)। তলপেটের গহ্বরের মধ্যের অনেকগুলো ক্ষুদ্র মেটাস্ট্যাটেসকে পেরিটোনিয়াল কারসিনোমেটোসিস বলা হয়। 

২. যেখানে কম মাত্রায় বাড়েঃ কোন কোন সময়ে, এটা সারা শরীরের ত্বক, পেশী বা অন্য অঙ্গেও ছড়াতে পারে।  

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার ছড়ানোর প্রচলিত উদাহরন কি? 

স্তনের ক্যান্সার-হাড়, লিভার, ফুসফুস, বুকের প্রাচীর ও মস্তিষ্ক।

মুত্রথলির ক্যান্সার- হাড়, লিভার ও ফুসফুসে ছড়ায়।

প্রোস্টেট ক্যান্সার- হাড়ে ছড়ায়।

ওভারিয়ান ক্যান্সার-লিভার, ফুসফুস ও পেরিটোনিয়ামে ছড়ায়।

ইউটেরাস ক্যান্সার- হাড়, লিভার, ফুসফুস, পেরিটোনিয়াম ও যোনিতে ছড়ায়।

ফুসফুসের ক্যান্সার- মস্তিষ্ক, লিভার ও অ্যাড্রিনাল গ্রস্থিতে ছড়ায়।

কোলন ও রেক্টামের ক্যান্সার- লিভার ও ফুসফুসে ছড়ানোর সম্ভবনা থাকে। 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের লক্ষণ কি?

এই নির্দিষ্ট রোগ ছড়ানোর ওপর মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের লক্ষণ নির্ভর করে। অনেকসময়েই লক্ষণ পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায় না। মেটাস্ট্যাটিক টিউমারের আকার ও জায়গার ওপর লক্ষণ নির্ভর করে। 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের প্রচলিত লক্ষণ ও উপসর্গ হলঃ

  • মাথাঘোরা
  • মাথাযন্ত্রনা
  • দেখতে সমস্যা
  • নিঃশ্বাসের সমস্যা
  • তড়কা
  • ব্যাথা ও হাড় ভেঙ্গে যাওয়া
  • জণ্ডিস
  • তলপেট ফুলে যাওয়া
  • হাঁটতে কষ্ট হয় বা দ্বিধাগ্রস্ত ভাব 

প্রাইমারি ক্যান্সার ও মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের পার্থক্য কি?

প্রাইমারি ক্যান্সার ও মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য একই। মনে করুন, যে স্তনের ক্যান্সার লিভার, হাড় ও মস্তিষ্কে ছড়াচ্ছে, তখন এটাকে যেযায়গায় ছড়াচ্ছে তার ওপর নামকরণ করা হয় না। উৎসস্থল হিসেবে নামকরণ করা হয়। বৈশিষ্ট্য একই বলে এটাকে ব্রেস্ট মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার বলা হয়।

মোটামুটিভাবে মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের উৎস পাওয়া গিয়েছে। উৎপত্তি যদি সঠিকভাবে বোঝা না যায়, তাহলে এটাকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ঃ

  • অ্যাডেনোকার্সিনোমা
  • স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা
  • নিউরোএন্ডোক্রিন কার্সিনোমা
  • পুয়োরলি ডিয়ারেন্সিয়েটেড ক্যান্সার 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের চিকিৎসা কি?

মেটাস্ট্যাটিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। আসলে, ক্যান্সারের বৃদ্ধি কমানো বা বন্ধ করা কিংবা লক্ষণের উপশম করাটাই হল চিকিৎসার লক্ষ্য। মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যে রেডিয়েশান ও সার্জারির পাশাপাশি কেমোথেরাপি ও অলটারনেটিভ কেমোথেরাপি অন্যতম।  

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন বিষয় কি?

গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলঃ

  • প্রাইমারি ক্যান্সার এবং উৎসস্থল
  • ক্যান্সার কতটা ছড়িয়েছে
  • বয়স 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের কি নিরাময় সম্ভব?

অধিকাংশক্ষেত্রেই নিরাময় করা যায় না। সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে শুধু বৃদ্ধির হার ধীরে করা যায়। রোগীর আরও বেশীদিন বাঁচতে পারবে। 

মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের বর্তমান পরিসংখ্যান কি?

আইসিএমআর-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, ভারতবর্ষে বর্তমানে ১৭ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং ২০২০ সালের মধ্যে ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৮ লক্ষ হবে।

ক্যান্সার ইন্ডিয়া.ওআরজি-র অন্য একটা পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতবর্ষে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২.৫ মিলিয়ান এবং প্রতি বছর ৭ লক্ষ নতুন কেস আসছে। আশেপাশের ঘটনার দিকে নজর দিলে এটা কিন্তু একেবারেই কাল্পনিক কিছু নয়।

0 comments:

Post a Comment