ভিটামিন বি১ এর উৎস ও অভাবজনিত রোগ
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কথা আমরা কম বেশি সকলেই শুনেছি। কিন্তু এই বি কমপ্লেক্স কোন কোন বি ভিটামিন এর সমন্বয়ে গঠিত তা অনেকেরই অজানা। সেই বি ভিটামিন গুলোর একটি ভিটামিন বি১ নিয়ে জানবো আজ।
ভিটামিন বি১ এর পরিচয়
এর রাসায়নিক নাম থায়ামিন ( Thiamine). থায়ামিন হচ্ছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত একটি ভিটামিন। প্রথম আবিষ্কৃত পানিতে দ্রব্যনীয় ভিটামিন হলো এই থায়ামিন ।সকল প্রাণীর জন্যই এই ভিটামিন অত্যাবশ্যক। কিন্তু শুধু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং উদ্ভিদ এটি তৈরি করতে পারে। তাই মানুষ এবং বাকি অন্যান্য প্রাণীকে খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করে এর চাহিদা পূরন করতে হয়।

ভিটামিন বি১ কেন দরকার?
আপনার শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে তাহলে আপনি বেরিবেরি, অপটিক নিউরাইটিস এবং ভারনিকো করসাকফ সিনড্রোমের মতো রোগে অতি সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত কোন রোগীর যদি এর অভাব হয় তাহলে তার শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।
দৈনিক ভিটামিন বি১ গ্রহণের পরিমান?
RDA অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য দৈনিক ভিটামিন বি১ গ্রহণ এর পরিমান 1.2 mg এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের দৈনিক গ্রহণ এর পরিমান 1.1 mg. গর্ভবতী মহিলা এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বেড়ে দাড়ায় 1.4 mg. জ্বরে, কঠিন পরিশ্রমে, দেহের শক্তি চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে থায়ামিনের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। যেহেতু থায়ামিন দেহে সঞ্চিত থাকে না, তাই খাবারের তালিকায় নিয়মিত থায়ামিন সমৃদ্ধ খাবার থাকা দরকার।
আরও পড়ুন- সামুদ্রিক মাছ এর অবিশ্বাস্য ১০ টি পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ভিটামিন বি১ আমরা কোন কোন খাবার থেকে পেয়ে থাকি?
- লাল / বাদামি চাল
- মটরশুঁটি
- মাশরুম
- মাছ-ডিম
- পালংশাক
- বীজ / শস্য জাতীয় দানার আস্তরনে
- শিম
- বাদাম
- যকৃত
- হৃদপিণ্ড
- ফুলকপি
ভিটামিন বি১ এর স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
থায়ামিন আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা আপনার দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়তা করে। যেমনঃ
শক্তি উৎপাদনঃ
চিনি আমাদের দেহের শক্তির প্রধান উৎস। কিন্তু জানেন কি, এর উপস্থিতির কারনেই চিনি জারিত হয়ে শক্তি উৎপাদনের উপযোগী হয়।
নার্ভকে রক্ষা করেঃ
আমাদের শরীরের স্নায়ুর চারপাশে মেলিনের শীটের বিকাশে সহায়তা করে। ভিটামিন বি১ এর অভাবে স্নায়ুর অবক্ষয় হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ক্ষুধা বৃদ্ধি করেঃ
ভিটামিন বি১ ক্ষুধা (appetite) এবং মানসিক স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ করেঃ
নিউরোট্রান্সমিটার এসিটাইলকোলিন উৎপাদনে সহায়তা করে যা স্নায়ু এবং পেশী গুলোর মধ্যে বার্তা বহন করে। এর পাশাপাশি হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম সঠিকভাবে চলতেও সাহায্য করে। এর ঘাটতি কার্ডিয়াক ফাংশনকে অনিয়মিত করে।Congestive Heart Failure এর রোগীদেরকে ৭ দিনের জন্য ভেইন এর মাধ্যমে (intravenously) ভিটামিন বি ১ দেওয়া হলে তাদের ইকোকার্ডিওগ্রামের উন্নতি দেখা যায়। এটি প্রমাণ করে যে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
চোখে ছানি পড়া রোধ করেঃ
ভিটামিন বি১ আপনার চোখে ছানি পড়ার সমস্যা রোধ করতে পারে।
হজমে সহায়তা করেঃ
হাইড্রোক্লোরিক এসিডের নিঃসরণে সহায়তা করে, যা খাদ্য হজমের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত।
আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করেঃ
আলঝেইমার রোগের অগ্রগতি কমিয়ে দেয়। Gray E.Gibson এর মতে, থায়ামিনের ঘাটতি এবং আলঝেইমার এর মধ্যে বেশ কিছু মিল আছে। উভয়ই মস্তিষ্কের গ্লুকোজ বিপাক হ্রাসের সাথে যুক্ত। আলঝেইমার রোগে ভোগা রোগীকে প্রতি দিন ১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ দেওয়া যেতে পারে।
স্মৃতিশক্তি উন্নত করেঃ
এটি আপনার স্মৃতিশক্তি কে উন্নত করতে পারে। এটি অনেক স্নায়ু জনিত রোগ যেমন, multiple sclerosis এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ভিটামিন বি১ এর ইতিবাচক প্রভাব এর জন্য একে morale vitamin ও বলা হয়।
RBC উৎপাদনঃ
ভিটামিন বি১ আপনার লোহিত রক্তকনিকা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টি এইজিং ভূমিকাঃ
শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা আপনার ত্বককে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তৈরি বয়সের ছাপ থেকে রক্ষা করে।
অভাবজনিত রোগঃ
ভিটামিন বি১ এর অভাবজনিত রোগের কথা বললে প্রথমেই যে রোগটির কথা মাথায় আসে তা হলো বেরিবেরি। বেরিবেরি ২ ধরনের হয়ে থাকে। (তথ্যসূত্র)
- Wet Beriberi
- Dry Beriberi
Wet beriberi
হার্ট এবং সংবহনতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। Wet beriberi তে পায়ে ও হৃদপিন্ডে পানি জমে এবং হৃদপিন্ডের আকার বেড়ে যায়। এটি চরম পর্যায়ে গেলে, heart failure এর সম্ভবনা দেখা দেয়।
Dry beriberi
স্নায়ুর ক্ষতি করে এবং পেশী শক্তি হ্রাস করতে পারে এমনকি শেষ পর্যন্ত পেশী পক্ষাঘাতও হতে পারে। এক কথায় যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে বেরিবেরিও প্রাণঘাতী হতে পারে। কিন্তু আপনার যদি থায়ামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে এই রোগের সম্ভবনা আপনার অনেকটাই কমে যাবে।
বেরিবেরি রোগের লক্ষন এর ধরনের ওপর নির্ভর করে
Wet beriberi এর লক্ষনঃ
- শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া।
- হার্ট রেট দ্রুত হওয়া
- নীচের পা ফোলা
Dry beriberi এর লক্ষনঃ
- পেশীর কার্যক্রম হ্রাস, বিশেষত নীচের পায়ে
- পা এর অনুভূতি কমে যাওয়া
- ব্যথা
- মানসিক বিভ্রান্তি
- কথা বলতে অসুবিধা
- বমি বমি
- অনিচ্ছাকৃত চোখের চলাচল
- পক্ষাঘাত/paralysis
বেরিবেরি এর মতো ভিটামিন বি১ এর অভাবজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে এবং সুস্থ থাকতে, আপনার খাদ্য তালিকায় থায়ামিন যুক্ত খাবার রাখুন। আর নিয়মিত তা গ্রহণ এর অভ্যাস করুন
0 comments:
Post a Comment