
ডিসলেক্সিয়া কি?
ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শিখতে সমস্যা হয়। এর ফলে তাঁদের ভাষা মনে রাখতে, পড়তে, লিখতে, বানান মনে রাখতে বা কথা বলতে সমস্যা হয়। ডিসলেক্সিয়ার ফলে বিশেষ কিছু কাজে শিশুদের সমস্যা হলেও এর সাথে বুদ্ধিমত্তার কোনও সম্পর্ক নেই।
শিশুর রোগের অবস্থার ওপর নির্ভর করে তাঁদের ঠিক কি কি সমস্যা হবে। কেউ লিখতে বা পড়তে অসুবিধা বোধ করে তো কেউ নতুন শব্দের বানান ও মানে মনে রাখতে পারে না। কেউ হয়ত ব্যাকরণে বা নতুন ভাষায় কাঁচা হয়। এর সাথে কারও এ ডি এইচ ডি বা অটিজম ও থাকে। এর ফলে পড়াশুনায় তাঁরা পিছিয়ে পড়ে।
ডিসলেক্সিয়ার চিহ্ন কি কি?
বাচ্চা স্কুলে যাবার সাথে সাথেই ডিসলেক্সিয়া চেনা সম্ভব।
স্কুল শুরু হওয়ার আগে
- অক্ষর ও শব্দ চিনে মনে রাখতে না পারা
- অক্ষরের সাথে আওয়াজের সম্পর্ক (ধ্বনি বা ফোনেটিক্স)
- নতুন শব্দ শেখা
- অক্ষর, সংখ্যা বা ছড়া মনে রাখতে সমস্যা
স্কুলের প্রাথমিক এবং মধ্য স্তরে
- তথ্য বা সংখ্যা মনে রাখতে না পারা
- বাজে হাতের লেখা, পেনসিল ধরতে সমস্যা
- ছড়া বা কবিতা মনে রাখতে না পারা
- একরকম দেখতে অক্ষরে তফাত না করতে পারা। (M,W অথবা b,d)
- ঠিকমত বানান না লেখা
- কথা বলতে গিয়ে শব্দ মনে না করতে পারা
- নির্দেশানুযায়ী কাজ করতে না পারা
- পাটিগণিতে সমস্যা
- নতুন ভাষা শিখতে সমস্যা
কিশোর বয়সে বা প্রাপ্তবয়স্ক হলে পরে
- গড়গড় করে বা জোরে জোরে কিছু পড়া
- রসবোধ, ধাঁধা, ছড়া বা বাগধারা বুঝতে না পারা
- কবিতা বা গল্প পড়ে মনে না রাখা
- সারসংক্ষেপ করতে না পারা
- অঙ্ক করতে না পারা
- সময়ানুবর্তিতার অভাব
ডিসলেক্সিয়া কেন হয়?
এই রোগের সঠিক কারণ নিয়ে আজও গবেষণা চলছে। তবে জিন-গত কারণে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
রোগনির্ণয়ের উপায়
ডিসলেক্সিয়া নির্ণয়ের কোন নির্দিষ্ট উপায় নেই। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিম্নলিখিত তথ্যাদি বিচার করে ডিসলেক্সিয়া বা অন্যান্য কোনও সমস্যা আছে কিনা দেখেন।
- পারিবারিক মেডিকাল ইতিহাস
- লেখাপড়ার ক্ষমতা
- দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি
- পড়াশোনার অগ্রগতি
ডিসলেক্সিয়ার চিকিৎসা
- বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা: শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞেরা মিলে শিশুকে বিকল্প উপায়ে শিখতে সাহায্য করেন। উদাহরণ স্বরূপ শিশুকে ক্লাসের পড়া অডিও রেকর্ড করে শোনানো হয়। ত্রিমাত্রিক অক্ষর ছুঁয়ে ও স্পর্শ করিয়ে অক্ষর চেনানো হয় অথবা ছবি দেখিয়ে নতুন শব্দ শেখানো হয়।
- বিশেষ প্রশিক্ষণ: একজন ফোনেটিক্স বিশেষজ্ঞ তাকে পড়তে শেখান এবং উচ্চারণে সাহায্য করেন।
- আই ই পি বা ইন্ডিভিজুয়ালাইজড এডুকেশন প্ল্যান: একটি বিশেষ পরিকল্পনা মাফিক ছোট ছোট লক্ষ তৈরি করে পড়তে উৎসাহ দেওয়া।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- ডিসলেক্সিয়াতে আক্রান্ত হলে এ ডি এইচ ডি হবার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় উল্টোটাও হয়। এ ডি এইচ ডি-তে আক্রান্ত হলে ডিসলেক্সিয়ার চিকিৎসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
- ডিসলেক্সিয়ার শিশুরা চূড়ান্ত প্রতিভার অধিকারী এবং সৃষ্টিশীল হয়। পর্যাপ্ত উৎসাহ ও সাহায্য পেলে তাঁরা নিজেদের প্রতিভার ক্ষেত্রে শিখরে পৌঁছতে পারে।
বিনা চিকিৎসার পরিণাম কি?
ছোটবেলাতেই এই রোগের চিকিৎসা না করা হলে শিশু বড় হয়েও লেখাপড়া, সময়ানুবর্তিতা এবং সমাজে চলার ক্ষেত্রে প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হয়।
ডিসলেক্সিয়ার রোগীর যত্ন নেওয়া
আপাত দৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও রোগ সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারনা থাকলে আপনি তাঁর যত্ন নেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
- ডিসলেক্সিয়ার কোন উপসর্গ দেখলে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- আপনার শিশুকে চিকিৎসকের কথা মত চলতে উৎসাহ দিন।
- জোরে জোরে গল্প পড়ে শোনান। রেডিওতে গল্প শুনতে উৎসাহিত করুন।
- আর একটু বড় হলে একসাথে খবরের কাগজ ও গল্পের বই পড়ুন। মনে রাখবেন, বড়দের দেখেই ছোটরা শেখে।
- দেখুন তার কী করতে ভাল লাগে। তাকে সেই ক্ষেত্রে উৎসাহ দিন।
- শিক্ষকের সাথে কথা বলুন এবং তাকে চিকিৎসকের সঙ্গেও দেখা করান। সেক্ষেত্রে তাঁর আপনার বাচ্চাকে পড়াতে সুবিধা হবে। সন্তানের পাশে দাঁড়ান। সে যা করতে পারে তাতে উৎসাহ দিন, যা পারে না তা নিয়ে জোর করবেন না।
প্রাপ্তবয়স্কদের ডিসলেক্সিয়া
যদি আপনার ছোট থেকে ডিসলেক্সিয়া থেকে থাকে তবে ভেঙ্গে পড়বেন না। এই রোগের চিকিৎসা এখনো সম্ভব। আপনি যত শীঘ্র সম্ভব সংশ্লিষ্ট মনোবিদের সাথে দেখা করুন।
0 comments:
Post a Comment