Wednesday, October 26, 2022

অটিজিম কি? || অটিজম কি ভাল হয় || autism || autism symptoms

 

অটিজিম কি?

অটিজিম, অটিজিম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) নামেও পরিচিত। এটা বৃদ্ধি ও বিকাশের গুরুতর অভাবের থেকে যোগাযোগ ও পারস্পরিক আদানপ্রদানের ক্ষমতা বা দক্ষতা দুর্বল হয়ে যাওয়াকে বলে। অটিজিম মানুষের, স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করার সাথে সার্বিক অনুভূতি, চেতনা-বুদ্ধি, সামাজিক এবং শরীর-স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

অটিজিমের লক্ষণ ও উপসর্গ কি কি?

নানা রকমের ও বৈচিত্র্যের লক্ষণ বা উপসর্গের দেখা যায়।

সাধারণ লক্ষণঃ

সামাজিক মেলামেশায় সমস্যা হওয়া সহ আলাপচারিতায় সমস্যা, অত্যাধিক কৌতুহল এবং একই ব্যবহার বারংবার করাই হল সবথেকে প্রচলিত লক্ষণ বা উপসর্গ।

অন্যান্য লক্ষণঃ

১. ব্যাবহারিক- অসঙ্গত বা অনুপযুক্ত সামাজিক কথোপকথন, পীড়াদায়ক ব্যবহার, চোখের দৃষ্টি খারাপ হওয়া, আবেগপ্রবনতা, নিজের ক্ষতি করা, একই গতিবিধি বারংবার কিংবা স্থিরভাবে একই শব্দ বা কাজ করা। 

২. বিকাশকেন্দ্রিক- শিশুদের দেরীতে কথা ফোটা বা শিখতে না পারা।

৩. পেশী সংক্রান্ত- বেঠিক সমন্বয়। 

৪. চেতনা-বুদ্ধি সংক্রান্ত- সীমিত কিছু জিনিষে প্রবল আগ্রহ কিংবা মনঃসংযোগ করতে সমস্যা। 

৫. মানসিক- অন্যদের আবেগ-অনুভূতি বা বিষণ্ণতার বিষয়ে না জানা।

৬. কথা- কথা বলায় সমস্যা বা অস্বাভাবিক গলার স্বর।

৭. আরও প্রচলিত- সহমর্মিতা, দুশ্চিন্তার অভাব বা শব্দের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়া। 

কি কারণে অটিজিম হয়?

অটিজিম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডারের কোন একটা পরিচিত কারণ জানা নেই। সমস্যা বা রোগ-ব্যাধির জটিলতার সাথে লক্ষণ ও গভীরতা যেহেতু আলাদা হতে পারে, তাই হয়তবা অনেক কারণ থাকতে পারে। সমস্যার পেছনে জিনগত এবং পরিবেশ উভয়ের একটা ভুমিকা আছে। 

জিনগতঃ অটিজিম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডারে অনেক জিন জড়িত। কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে, এই রোগ বা সমস্যা রেট সিনড্রোম বা ফটাজাইল এক্স সিনড্রোমের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অন্যদের ক্ষেত্রে জিনগত পরিবর্তন বা পরিব্যাপ্তি কিন্তু রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাসত্ত্বেও অন্যান্য জিনও মস্তিষ্কের বৃদ্ধি-বিকাশ সহ মস্তিষ্ক কীভাবে সমন্বয় সাধন করবে সেটাকে প্রভাবিত করে অথবা সমস্যার গভীরতাও ঠিক করে দেয়। জিনগত বেশ কিছু পরিব্যাপ্তি হয়তবা বংশগত হলেও অন্যগুলো নিজের থেকেই হয়।

পরিবেশগত কারণঃ বর্তমানে গবেষকরা খোঁজার চেষ্টা করছে, যে ভাইরাল সংক্রমণ, মেডিকেশান বা গর্ভাবস্থাকালীন জটিলতা না কি বায়ুদূষণ এই সমস্যা চাগিয়ে তোলে। 

অটিজিম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার কীভাবে ডায়াগনিসিস করা হয়?

অটিজিম ডায়াগিনিসিস করবার জন্য সেইঅর্থে রক্ত পরীক্ষার মতন কোন মেডিক্যাল টেস্ট নেই বলে রোগ নির্ণয় করা কষ্টকর। ডাক্তাররা শিশুর স্বভাব-ব্যবহার ও বৃদ্ধি-বিকাশ দেখে রোগ নির্ণয় করেন। এএসডি কোন কোন সময়ে ১৮ মাস বা কম বয়সেই চিহ্নিত করা যায়। 

শিশুদের বয়স ২ বছর হলেই অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ দ্বারা ডায়াগনিসিসকে ভরসাযোগ্য বলে ধরে নেওয়া হয়। অবশ্য, অনেক শিশুরই আরও বেশী বয়সের আগে চূড়ান্ত ডায়াগনিসিস করা হয় না। 

এএসডি ডায়াগনিসিস দুই ধাপে করা হয়ঃ

১. ডেভেলাপমেন্টাল স্ক্রিনিং-এই সংক্ষিপ্ত টেস্টের দ্বারা এটা বোঝা যায়, যে সঠিক সময়ে শিশুদের মৌলিক দক্ষতা গড়ে উঠছে, না কি দেরী হচ্ছে। এই স্ক্রিনিং-র সময়ে, ডাক্তার বাবা-মাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে অথবা কথা বলতে পারে এবং পরীক্ষা করার সময়ে বাচ্চার সাথে খেলতে পারেীতা দেখার জন্য, যে শিশু কথা বলতে পারে কি না, তার ব্যবহার ও গতিবিধি। কোন কিছুতে দেরীর লক্ষণ কিন্তু সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে।

২. কমপ্রিহেন্সিভ ডায়াগনিস্টিক ইভালুয়েশান- এটা রোগ নির্ণয়ের দ্বিতীয় ধাপ। শিশুর ব্যবহার ও বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং বাবা-মায়ের সাথে কথোপকথন, এই পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার অন্তর্গত। এর মধ্যে জিনের পরীক্ষা সহ, শ্রবণ ক্ষমতা ও দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা, স্নায়বিক টেস্ট ও অন্যান্য মেডিক্যাল পরীক্ষাও থাকতে পারে। 

অটিজিমের বিভিন্ন চিকিৎসা কি কি? 

ব্যবহারিক ও যোগাযোগমুলক পন্থাঃ

  • অ্যাপ্লায়েড বিহেভেরাল অ্যানালিসিস (এবিএ)।
  • সেনসারি ইন্টিগ্রেশান।
  • টিইএসিসিএইচ- ট্রিটমেন্ট এবং এডুকেশান অফ অটিস্টিক এবং রিলেটেড কমিউনিকেশান হ্যান্ডিক্যাপড চিলড্রেন।
  • স্পেশালাইজ থেরাপি- কর্ম সংক্রান্ত, কথাবার্তা ও শারীরিক থেরাপি। 

অটিজিমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধঃ

ওষুধ কিন্তু অটিজিমের লক্ষণ ও উপসর্গের উন্নতির জন্য সীমিত ভুমিকা পালন করে। অটিজিম সংক্রান্ত ব্যবহারের সাথে যুক্ত ব্যবহারিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন সময়ে ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে সিলেক্টিভ সেরেটনিন রিউপটেক ইনহিবিটার (এসএসআরআই) যথা ফ্লুক্সোথাইন, ফ্লুক্সামাইন, সেরেটোনিন ও ক্লোমিপ্রামাইন থাকে। 

কমপ্লিমেন্টারি ও বিকল্প চিকিৎসাঃ

এইধরনের চিকিৎসা, কমপ্লিমেন্টারি ও বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে পরিচিত, যার মধ্যে থাকতে পারে বিশেষ খাদ্যাভ্যাস, চেলাশান, শরীর থেকে পারদের মতন ভারী ধাতু বের করবার চিকিৎসা, বায়োলজিক্যালের মতন সিক্রেটিন বা ডিপ প্রেশারের মতন বডি বেসড সিস্টেম। 

ডায়াটারি পন্থাঃ

খাদ্যতালিকায় অসংখ্য বায়োমেডিক্যাল হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত বদলের কথা বলে। এইসব পরিবর্তনের মধ্যে আছে শিশুর খাদ্যতালিকা থেকে কিছু খাবার বদলানোর সহ ভিটামিন ও খনিজ সাপ্লমেন্ট ব্যবহার অন্তর্গত। খাবার থেকে হওয়া অ্যালার্জি বা ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব এএসডি-র লক্ষণের জন্য দায়ী ধারনার ওপর নির্ভর করে ডায়াটারি চিকিৎসা করা হয়। কোন কোন মা-বাবা বিশ্বাস করে। যে খাদ্যাভ্যাসের বদল করলে সেটা শিশুর অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়ার পার্থক্য করবে।

0 comments:

Post a Comment