তীব্র গরমকালকে বিদায় জানিয়ে বৃষ্টিকে স্বাগত জানান। বর্ষাকাল তাজা ভাব দেবার জন্য আগত! বর্ষাকালের ঠাণ্ডা আবহাওয়া ভালো লাগলেও নির্দিষ্ট কিছু অসুখ কিন্তু সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সময়ে ভিজে ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ত্বকের সংক্রমণ হামেশাই হয়। এটা ছাড়াও, আরও কিছু প্রচলিত রোগ আছে, যার কিছু কিছু সহজেই নিরাময় করা গেলেও বেশ কিছু কিন্তু প্রাণঘাতী। এখানে এইসব মরশুমি রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে বলা হল।
ম্যালেরিয়া
সবথেকে প্রচলিত এই রোগ স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশা দ্বারা ছড়ায়। বর্ষাকালে জল জমার সমস্যা দেখা যায়। মশার বংশ বিস্তারের জন্য এটা আদর্শ পরিবেশ। নিয়মিত ব্যবধানে জ্বর হওয়া, কাঁপুনি, পেশীর যন্ত্রণা ও দুর্বলতা হল ম্যালেরিয়ার বৈশিষ্ট্য।
প্রতিরোধঃ আপনার জায়গায় যাতে জল না জমে থাকে সেটা সুনিশ্চিত করুন কারণ এটা মশার বংশ বিস্তারের জায়গা। ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধের জন্য মশকিউটো রিপেলেন্ট ও নেট ব্যবহার করার কথা মাথায় রাখুন।
ডেঙ্গু
অ্যানোফেলিস মশা থেকে ডেঙ্গু হয়। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন মশা যখন কামড়ায় সেই ভাইরাস তখন তার শরীরে প্রবেশ করে। এই সংক্রামিত মশা অন্য কাউকে কামড়ালে সেই ভাইরাস তখন সেই ব্যক্তির রক্তস্রোতে ঢুকে যায় এবং এইভাবে রোগ ছড়ায়।
প্রতিরোধঃ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর না হলে মশারি টাঙান। মশা মারার জন্য এরোসল ও লিকুইড স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাইরে বেরোলে লম্বা হাতা জামা ও ট্রাউজার পরুন। ঘুরতে যাবার সময় ইনসেক্ট রিপেলেন্ট লাগান।
চিকনগুনিয়া
সংক্রামিত ইডিস অ্যালবোপিকটাস মশা থেকে চিকনগুনিয়া হয়। এরা স্থির জলে বংশ বিস্তার করে ও দিনের বেলায় কামড়ায়।
প্রতিরোধঃ মশাকে দূরে রাখতে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কিংবা জানলা/দরজায় পর্দা লাগান। মশারি টাঙিয়ে ঘুমান। পুরোহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরুন। ইনসেক্ট রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন।
কলেরা
কলেরা অন্য একটা মারাত্মক অসুখ, যা দুষিত খাবার কিংবা জলের ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও এর জন্য দায়ী। গুরুতর ডায়ারিয়ার সাথে জলের মতন স্টুল, বমি ও পেশিতে খিঁচ ধরা হল এই রোগের লক্ষণ।
প্রতিরোধঃ ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। মিনারেল কিংবা ফোটানো জল খান। রান্না করা গরম খাবার খান এবং রাস্তার খাবার ও কাঁচা বা ভুলভাবে রান্না করা মাছ বা যেকোন ধরনের সী ফুড এড়িয়ে চলুন। খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া যায় এমন ফল ও সবজি খান।
টাইফয়েড
টাইফয়েড হল জল বাহিত রোগ যা বর্ষাকালে হয়। স্টিপটিক ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই দুষিত জল ও খাবারের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। অধিকাংশ প্রচলিত লক্ষণের মধ্যে অনেকদিন ধরে থাকা জ্বর, তলপেটে গুরুতর যন্ত্রণা ও মাথাব্যথা অন্যতম।
প্রতিরোধঃ ঘন ঘন হাত ধোয়াটা আবশ্যিক। ডিহাইড্রেশান আটকানোর জন্য রোগীর অধিক পরিমাণ ফ্লুয়িড খাওয়া দরকার। বাইরের খাবার ও জল না খাওয়া উচিৎ। রান্না করা খাবার খাওয়ার সাথে কাঁচা ফল ও সবজি না খেলেই ভালো। সেরে ওঠার পরেও সতর্ক থাকা উচিৎ।
পাকস্থলীর সংক্রমণ
গ্যাস্ট্রোইন্টেরিটিসের মতন পাকস্থলীর সংক্রমণ থেকে প্রচুর বমি ও ডায়ারিয়া হয়। পাকস্থলী ও অন্ত্রে অস্বস্তি হয় এবং জ্বালা ও ব্যথা করে। এটা প্রধানত ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে হয়।
প্রতিরোধঃ ভালোকরে হাত পরিষ্কার করা দরকার। বেশকিছুক্ষন আঢাকা ফল ও সবজি এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। কাটিং বোর্ড পরিষ্কার রাখার সাথে সবজি ও মাংস কাটার আলাদা বোর্ড রাখা দরকার। হাইড্রেটেড থাকুন ও জল পরিষ্কার ও ফিল্টার রাখাটা নিশ্চিত করুন। অধিক পরিমাণ সুগার ও মশলাদার খাবার খাবেন না।
ভাইরাল জ্বর
বর্ষাকালের রোগের তালিকায় ভাইরাল জ্বর খুবই প্রচলিত নাম। ক্রমাগত হাঁচি, গলা ব্যথা ও ভাঙা এবং জ্বর হল এই রোগের প্রচলিত লক্ষণ।
প্রতিরোধঃ বৃষ্টিতে ভিজিবেন না। ভিজে গিয়ে থাকলে ঠাণ্ডা যাতে না লাগে তাই জামা বদলে ফেলুন। হলুদ দেওয়া গরম দুধ খান ও গরম জলে গার্গেল করুন ও গলা ব্যথার হাত থেকে রেহাই পান।
জন্ডিস
জন্ডিসে চোখের সাদা অংশ এবং ত্বক হলুদা রঙের হয়ে যায় যা হাইপারবিলিরুবিনেমিয়া থেকে হয়। শরীরের জলও হলুদ হয়ে যেতে পারে। বিলিরুবিনের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। সামান্য বেড়ে যাওয়া মাত্রা থেকে ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যায় এবং অধিক মাত্রার কারণে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ বাদামী রঙের হয়ে ওঠে।
প্রতিরোধঃ হেপাটাইটিস এ এবং বি-র টিকা নিন। অতিরিক্ত মদ্যপান করবেন না। যথাযথ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার সাথে রাস্তার খাবার ও জল এড়িয়ে চলুন।
লেপ্টোস্পিরোসিস
এটা একধরনের বিরল ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা পশুদের থেকে মানুষে ছড়ায়। এটা ত্বক, চোখ, মুখ, নাক কিংবা জরায়ুর সরাসরি সংস্পর্শ থেকে বেরনো পশুর ইউরিন সহ জল থেকে ছড়ায়।
প্রতিরোধঃ আপনি যদি চাষ করেন কিংবা নালা-নর্দমা বা ড্রেনে কাজ করেন তাহলে সুরক্ষার জন্য জামা পড়ুন যথা ওয়াটারপ্রুফ গ্লাভস ও বুট, গগলস এবং মুখোশ। এমন কোন জায়গায় যাচ্ছেন যেখানে লেপ্টোস্পিসোসিস প্রচুর ছড়িয়েছে তাহলে নদী, পুকুর বা লেকের টাটকা জলের সংস্পর্শে আসবেন না, ঢাকা পোশাক পড়ুন, ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন ও শুধুমাত্র মিনারেল ওয়াটার খান।
0 comments:
Post a Comment