Saturday, October 1, 2022

ব্রণ



ব্রণ 

অ্যাচেন ভালগারিস ত্বকের একপ্রকার দীর্ঘকালীন রোগ। এই রোগে তেল এবং ত্বকের মৃত কোষের জন্য গ্রন্থি-কোষ বন্ধ হয়ে যায়, যাকে কেউ কেউ ত্রুটি বা কলঙ্ক, ব্ল্যাকহেডস, ওয়াইহেডস, ফুসকুড়ি বা জিটস বলে। 

বয়ঃসন্ধির সময়ে সেবাসেয়াস (তৈলাক্ত) গ্রন্থির কার্যকারিতার হয়ে সমস্যার সূত্রপাত। পুরুষ এবং মহিলা, উভয়ের অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত পুরুষ হরমোনকে এই গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে। ফুসকুড়ি সাধারণত মুখে, ঘাড়ে, বুকে এবং পিঠে দেখা যায়। 

কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এটা হামেশাই হয়, যা এই বয়স পেরিয়ে যাবার পরে ভালো হয়ে যায়। অনেক মহিলারা যাদের কোনোদিন ব্রণ হয় নি তাদের ক্ষেত্রে মেন্সট্রুয়াল পিরিয়ড শুরু হবার ঠিক আগে ব্রণ হওয়া শুরু হয়।  

লক্ষণ

ব্রণর লক্ষণ হল: ব্ল্যাক-হেড, হোয়াইটহেড, আঁশযুক্ত লাল ত্বক, ছোট ছোট লাল বাষ্প, ফুসকুড়ি, সিস্ট এবং ত্বকে দাগ বা ক্ষত। 

কারণ

ব্রণ যেসব কারণের জন্য হয় তা হল:

  • ত্বকের মৃত কোষ।
  • তেল তৈরি হওয়া।
  • ব্যাকটেরিয়া।
  • বন্ধ লোমকূপ। 

বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, বিশেষকরে টেস্টোস্টেরন। এই পরিবর্তিত হরমোনের কারণে ত্বকের গ্রন্থিরা আরও তেল (সেবাম) তৈরি করে। লোমকূপ থেকে তেল বেরিয়ে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করার পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।  

রোগ নির্ণয়

রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে, শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি রোগীর ওষুধ-চিকিৎসার ইতিহাস জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং ডাক্তার এগুলোর মূল্যায়ন করে। মহিলাদের মেনস্ট্রুয়েশানাল চক্রের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হতে পারে, কারণ এর মাধ্যমে ডাক্তার এটা বোঝার চেষ্টা করে, যে হরমোন এই ব্রণ বা ফুসকুড়ি বাড়বার পিছনে দায়ী কি না।

প্রতিরোধ 

ব্রণ বা ফুসকুড়ি আটকানো সম্ভব বা হলেও, পরিস্থিতি খারাপ হওয়া আটকাতে কিছু ঘরোয়া প্রতিকারে উপকার পাওয়া যায়।

  • বেশী ঘেমে যাওয়া আটকান এবং ঘেমে গেলে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • দাগ বা ক্ষত এবং ত্বকের অন্যান্য ক্ষতির হাত থেকে বাঁচুন। 
  • মুখে বার বার হাত দেবেন না।
  • কড়া রাসায়নিক এবং তেলের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
  • সরাসরি সূর্যালোকের  হাত থেকে ত্বককে আটকান।
  • বেশী তেলযুক্ত হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। 

চিকিৎসা

ব্রণ বা ফুসকুড়ির চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল:

  • ব্রণ বা ফুসকুড়ি নিয়ন্ত্রণ করা।
  • ক্ষত/দাগ এবং ত্বকের অন্যান্য ক্ষতি এড়িয়ে চলা।
  • ক্ষত বা দাগ যাতে দেখা না যায়। 

রোগের চিকিৎসার জন্য অসংখ্য ওষুধ পাওয়া যায়, যা বারবার ব্রণ ফেটে গিয়ে হওয়া জটিলতা প্রতিরোধ করে। প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে নাতিশীতোষ্ণ দেশে যে সব ওষুধ পাওয়া যায়, তা হল:

রেটিনয়েডঃ জেল, ক্রিম এবং লোশানের মতন প্রচলিত ওষুধ, যা ভিটামিন এ থেকে বানানো হয় এবং এর মধ্যে অ্যাডাপ্যালেন, ট্রেটিনোয়েন এবং ট্যাজারোটেন থাকে। এটা চুলের গ্রন্থি কোষের মুখ বন্ধ করে কাজ করে।

অ্যান্টিবায়োটিক: ত্বকের অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং লালচে ভাব কমায়। চিকিৎসার প্রথম কয়েকমাসে, রেটিনয়েড ও অ্যান্টিবায়োটিক একসাথে খেতে পারেন। অ্যান্টিবায়োটিক সকালবেলায় এবং রেটিনয়েড সন্ধেবেলায় খাওয়া যেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি বাধা তৈরি হবার সম্ভাবনা কমাবার জন্য এটাকে বেনজয়েল পেরক্সাইডের সাথে খাওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বেনজয়েল পেরক্সাইডের সাথে এরিথাইরোক্সোমাইসিন এবং বেনজয়েল পেরক্সাইডের সাথে ক্লিডামাইসিন।

ডেপসনঃ টপিকাল রেটিনয়েডের সাথে একসাথে ব্যবার করলে এই জেল যথেষ্ট কার্যকারী। ত্বকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে শুষ্কতা এবং লালচে ভাব অন্যতম।

ওরাল ওষুধ

ব্রণ বা ফুসকুড়ির চিকিৎসায় ডাক্তাররা সাধারণভাবে যে ধরনের ওষুধ দেন তা হল:

ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক: যেমন ডক্সিসাইক্লিন, ক্লিডামাইসিন। টেট্রাসাইক্লিন এবং এরিথ্রোমাইসিন

কম ডোজের জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ: এর মধ্যে ইস্ট্রোজেন থাকে, যা মহিলাদের মাঝারি মাত্রার ব্রণ এবং প্রিমেন্সট্রুয়াল ঝলকের সময়ে কাজ দেয়।

অ্যান্ড্রোজেন ব্লকারঃ স্পিরোনোলাক্টোন ব্রণের চিকিৎসায় কাজ দেয়। এই ওষুধ মেদ থেকে নিঃসৃত রসের দ্বারা তৈরি হওয়া কারোর ক্ষত নিরাময় করে।

 

0 comments:

Post a Comment