Saturday, October 1, 2022

মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার

 

 মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার

মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার হল একটি বিস্তৃত ক্যানসার যা মাথা এবং ঘাড় অঞ্চলে ঘটে।

মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে আপনার ক্যান্সারের ধরন, অবস্থান এবং আকারের উপর। মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের চিকিৎসায় প্রায়ই সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকে। চিকিত্সা মিলিত হতে পারে।

চিকিত্সার পরে, মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন শ্রবণশক্তি হ্রাস, খেতে অসুবিধা, দাঁতের সমস্যা, থাইরয়েড সমস্যা, শ্বাস নিতে অসুবিধা বা কথা বলতে অসুবিধার সাথে কাজ করা জড়িত থাকতে পারে।

প্রকারভেদ

লক্ষণ

সাধারণভাবে লক্ষণ এবং উপসর্গ হল- লিম্প তৈরি হয় (যার নিরাময় হয় না) বা ক্ষত বা ঘা (মিলিয়ে যায় না), গিলতে কষ্ট, স্বরে পরিবর্তন, অস্বাভাবিক রক্তপাত, মুখ ফুলে যাওয়া বা নিঃশ্বাসের কষ্ট। মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের মধ্যে অনেকগুলো শরীরের অঙ্গ জড়িত, যার মধ্যেঃ

  • নাসাল ক্যাভিটি ক্যান্সার।
  • ঠোঁট এবং ওরাল ক্যাভিটি ক্যান্সার।
  • ন্যাসোফ্যারিঙ্গাল ক্যান্সার।
  • ওরোফ্যারিঙ্গাল ক্যান্সার।
  • হাইপোফ্যারিঙ্গাল ক্যান্সার।
  • ল্যারিঙ্গাল ক্যান্সার (ফুলে যাবার সাথে যন্ত্রণা অথবা কানে ব্যথা)।
  • লালা গ্রন্থির ক্যান্সার।
  • প্যারাথাইরয়েড ক্যান্সার।
  • থাইরয়েড ক্যান্সার। 

কারণ

মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের জন্য অনেক কারণ থাকতে পারে। সেই সব কারণের মধ্যে কিছু প্রচলিত কারণ সম্পর্কে বলা হলঃ

  • তামাক চেবানো, পান অথবা গুটখা।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল।
  • অপ্রতুল খাবার খাওয়া।
  • সংক্রমণ।
  • গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স রোগ।
  • এপ্সটেইন-বার ভাইরাস।
  • হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টটেশান

অন্যান্য সম্ভাব্য কারণঃ দীর্ঘদিন পেট্রলিয়াম ইন্ডাস্ট্রিয়াল সামগ্রির সংস্পর্শ কিংবা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কাঠের ধুলো-ময়লা অথবা রঙের ধোঁয়া থেকেও এটা হতে পারে।  

রোগ নির্নয়

রোগীর লক্ষণ এবং উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে ডাক্তার টেস্ট বা পরীক্ষা করে রোগ নির্নয় করে। সাধারন বা প্রচলিত টেস্ট হল

  • শারীরিক পরীক্ষাঃ ছোট আয়না এবং/অথবা আলোর সাহায্যে চোখে দেখে ওরাল এবং নাসাল ক্যাভিটি, গলা, ঘাড় এবং জিভ পরীক্ষা করে দেখা হয়। ডাক্তার ঘাড়, ঠোঁট, মাড়ি এবং থুতনিতে লাম্প বা ফোলা পেতে পারে। 
  • বায়োপসি, এন্ডোক্সোপি।
  • রক্ত বা মুত্র পরীক্ষা।
  • এক্স-রে।
  • সিটি স্ক্যানঃ এটা ঘাড় ও মাথার ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিস্তারিত চিত্রের সমাহার।
  • এমআরআইঃ এটা একটা শক্তিশালী চুম্বক যা কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। এটাও মাথা ও ঘাড়ের ভেতরের বিস্তারিত ছবি তোলে।
  • পিইটি স্ক্যানঃ এটা বিশেষ উপায়ের পরিমার্জিত এবং যথাযথ পদ্ধতি। ক্যান্সার কোষ কিংবা সন্দেহজনক কোষ এটাকে শোষণ করে ফলে স্ক্যানে গাঢ় জায়গা হিসেবে দেখা যায়।
  • ওরাল ক্যাভিটি পরীক্ষাঃ এটা সাধারণত শারীরিক পরীক্ষার অন্তর্গত।
  • স্যালিভারি বা লালা গ্রন্থির পরীক্ষাঃ এটা সাধারণত শারীরিক পরীক্ষার অন্তর্গত।
  • প্যারান্যাশাল সাইনাস ও নাসাল ক্যাভিটি পরীক্ষা।
  • ফ্যারিংক্স পরীক্ষা। 
  • লিম্প নোড এবং ঘাড়ের ওপরের অংশ।    

প্রতিরোধ

উপরে উল্লেখিত ঝুঁকির কারণ ( কি কারণে হয়) এড়িয়ে যাওয়াটাই কার্যকারি প্রতিরোধ। রুটিন মেডিক্যাল পরীক্ষা প্রাথমিক ধাপে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার চিহ্নিত করতে পারে যাতে এটা সহজেই চিকিৎসা করা যায় এবং বেঁচে থাকার সম্ভবনা দারুণ বেড়ে যায়। এটা আশা করা হয়, যে এইচপিভি টিকা এইচপিভি থেকে হওয়া মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার ধ্বংস করতে পারবে।

চিকিৎসা

মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার চিহ্নিত হবার পরে, ডাক্তার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করে। প্রচলিত কিছু চিকিৎসা প্রক্রিয়া হল। যা নিচে উল্লেখ করা হল।

ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে, ডাক্তার ব্যক্তির চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করে। প্রখরতা, ধাপ এবং আনুসাঙ্গিক অন্যান্য কারণের ওপর নির্ভর করে থেরাপির ধরন আলাদা আলাদা হয়।

সার্জারিঃ সার্জারি চিকিৎসার প্রচলিত ধরন যা এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রায়শই ব্যবহার করা হয়। সাধারণত, ক্যান্সারাস অথবা সংক্রামিত কোষকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হল প্রধান লক্ষ্য।

রেডিয়েশান থেরাপিঃ রেডিয়েশান থেরাপি সবথেকে প্রচলিত চিকিৎসার রকমফের। বিভিন্ন ধরনের রেডিয়েশান থেরাপি আছে, যা হলঃ

১. ৩ডি কনফরমাল রেডিয়েশান থেরাপি

২. ইনটেন্সিটি-মডুলেটেড রেডিয়েশান থেরাপি।

কেমোথেরাপিঃ স্থানীয়ভাবে ডোসেটাক্সেল-ভিত্তিক কেমোথেরাপি ভীষণভাবে ফলপ্রসূ। এটা মাথা ও ঘাড়ের অ্যাডভান্স ক্যান্সারে ব্যবহৃত হয়।

ফটো ডায়নামিক থেরাপিঃ এটা মিউকোসাল ডিস্প্লেসিয়া এবং মাথা ও ঘাড়ের ছোট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দারুণভাবে কার্যকারি।

টারগেটেড থেরাপিঃ এই পদ্ধতিতে স্বাভাবিক কোষের ক্ষতি না করে নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষকে (টারগেটেড সেল) আক্রমণ করার জন্য কিছু ওষুধ বা উপাদান (যথা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি) ব্যাবহৃত করা হয়।


 

0 comments:

Post a Comment