Wednesday, November 16, 2022

সাপে কাটলে কী করবেন, সকলের জেনে রাখা উচিত



হ্যালো বন্ধুরা । আমাদের জীবন আনন্দ, সুখ দুঃখ হাসি ও কান্নার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এর মধ্যেই রয়েছে রোগ ব্যাধি ও জড়ার উপস্থিতি।

বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যানে বেশিরভাগ রোগই নিরাময় করা সম্পূর্ণ ভাবে সম্ভব, কিন্তু বেশকিছু রোগের চিকিৎসা আজও অজানা !

আমাদের এই লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও তাদের  নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।


বিষধর সাপের কামড়ের ক্ষত জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিষধর সাপের ওপরের দাঁতের গোড়ায় যে বিষথলি থাকে, কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষ ক্ষতের মাধ্যমে রক্তনালিতে প্রবেশ করে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

সাপের বিষের বিষাক্ত উপাদানসমূহ স্নায়ুকোষকে আক্রমণ করে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া প্রতিহত করে এবং পরিশেষে মানুষের মৃত্যু ঘটায়।

সব সাপ বিষধর নয়, অল্প কিছু সাপ বিষধর। ভারতবর্ষে ২১৬ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে বিষ থাকে মাত্র ৬৮ প্রজাতির সাপের। সচরাচর বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে গোখরা, কালকেউটে, চন্দ্রবোড়া। তাই এদের কাছ থেকে দূরে থাকাই ভালো।


সাপের কামড় চেনার উপায়:

বস্তুত দংশিত স্থানে কামড়ের দাগ দেখে সাপটি বিষধর কি না তা শনাক্ত করা সম্ভব। সব বিষধর সাপের সামনে দুটো বিষদাঁত থাকে, যা অন্যান্য দাঁত থেকে বড় এবং বাঁকানো। কোনো কোনো বিষধর সাপের দাঁত ইনজেকশনের সুচের মতো তীক্ষ্ণ। সাপের কিন্তু দাঁতে কোনো বিষ থাকে না।  সাপে কামড়ালে যদি দংশিত স্থানে দুটো তীক্ষ্ণ গভীর দাগ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সেটা বিষধর সাপের কামড়। আর যদি সে রকম দাগের বদলে কেবল ছোট ছোট এক সারি দাগ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সাপটি বিষধর নয়।

গোখরায় কামড়ালে ছয় থেকে আট মিনিটের মধ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। দংশিত স্থান লাল হয়ে যায় এবং চাপ দিলে ব্যথা লাগে। কিছুক্ষণ পর সেখানে কিছুটা জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। ২৫ মিনিট পর অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। রোগীর ঘুম ঘুম ভাব আসে। রোগীকে কিছুটা মুমূর্ষু লাগে। তার পা দুর্বল হয়ে আসে এবং সে দাঁড়িয়ে থাকতে বা চলাচল করতে পারে না। ৩৫ থেকে ৫০ মিনিট পর রোগীর মুখে প্রচুর লালা ঝরে, এমনকি সে বমি করতে থাকে। তার জিহ্বা ও স্বরযন্ত্র ফুলে যায়। ফলে সে ঠিকমতো কিছু গিলতে বা কথা বলতে পারে না। দুই ঘণ্টা পর তার শ্বাস-প্রশ্বাস লঘু হয়ে আসে, তার জ্ঞান থাকে তবে কথা বলতে পারে না।

পরিশেষে তার শ্বাসক্রিয়া ও হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়। কালকেউটে সাপে কামড়ালে গোখরার কামড়ের মতো উপসর্গ দেখা দেয় বটে, তবে দংশিত স্থানটি ফুলে ওঠে না কিংবা জায়গাটিতে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হয় না। তবে রোগীর ঝিমঝিম ভাব আসে এবং তাকে মুমূর্ষু দেখায়। গোখরা, কেউটে, শঙ্খচূড় প্রভৃতি কোবরা শ্রেণির সাপের বিষে থাকে নিউরোটক্সিন নামক এক ধরনের রস যা স্নায়ুকে বিকল বা পঙ্গু করে দেয়। 


চন্দ্রবোড়া হলো ভাইপার শ্রেণির সাপ। এই শ্রেণির সাপের বিষে প্রধানত থাকে হিমোটক্সিন রস, যার কাজ হলো রক্তকণিকা ভেঙে দেওয়া এবং রক্তপাত ঘটানো। এর ফলে রক্তবমি, রক্তপায়খানা ও রক্তপ্রস্রাব হতে পারে। হিমোটক্সিন ধীরে কাজ করে বলে এই শ্রেণির সাপের কামড়ে মৃত্যু ধীরে হয়।

কি করবেন:-

(১) সর্পদংশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সর্পদংশনের নিরাময়যোগ্য আধুনিক চিকিত্‍সার ব্যাপারে আশ্বস্ত করুন। কারণ সর্পদংশনে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুভয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকেন। 

(২) পা আক্রান্ত হলে হাঁটা যাবে না।

 (৩) হাত আক্রান্ত হলে এড়িয়ে চলতে হবে হাতের সমস্ত নড়াচড়া। 

(৪) প্রয়োজনে আক্রান্ত হাত বা পায়ের সাথে একটি বন্ধফলক এঁটে দিয়ে তা উপযুক্ত বাঁধন যেমন- দড়ি, গামছা প্রভৃতি দ্বারা বেঁধে রহিত করতে হবে সব নাড়াচাড়া। কারণ আক্রান্ত স্থানের অযাচিত নাড়াচাড়া পুরো শরীরে বিষ ছড়ানোর জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

(৫) যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক স্বস্তির লক্ষ্যে লোক সমাজে বহুল প্রচলিত দুটি পট্টি যথাক্রমে আক্রান্ত স্থানের কিছুটা আগে ও পরে এমনভাবে বাঁধতে হবে যে, যার মধ্য দিয়ে হাতের কনিষ্ঠা আঙুল সহজে প্রবেশ করানো যায়। এতে করে পায়ের রক্ত সঞ্চালনে কোনো রূপ বিরূপ প্রভাব পড়ে না। যদিও আধুনিক চিকিত্‍সায় এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তদুপরি চন্দ্র বোড়া সাপের দংশনে এর ব্যবহার পুরোপুরি নিষেধ। 

(৬) সেই সাথে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উন্নত চিকিত্‍সার জন্য নিকটস্থ উপযুক্ত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।


কি করবেন না:-

(১) আক্রান্ত স্থানের আগে ও পরে দুই বা ততধিক পট্টি শক্ত বাঁধা। কারণ এতে আক্রান্ত স্থানে রক্তের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এমনকি আক্রান্ত স্থানে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। 

(২) আক্রান্ত স্থান ও এর চারপাশে ধারালো জিনিস দিয়ে চেরার মাধ্যমে বিষ ঝরানোর ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অযাচিত রক্ত ঝরানো। 

(৩) আক্রান্ত স্থানে চেরার মাধ্যমে রক্ত ঝরানোর পর তা মুখ বা মুরগির বাচ্চার পায়ুপথ (ক্লোয়াকা) দ্বারা চোষানো। 

(৪) কোনো দহনকারক পদার্থ যথা- কার্বলিক এসিড দ্বারা আক্রান্ত স্থান পোড়ানো। 

(৫) আক্রান্ত স্থানে বিষ শোষণকল্পে বিভিন্ন লতাগুল্মের লেই কিংবা গোবর বা কাদামাটি লাগানো। কারণ এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং আক্রান্ত স্থানে তা বিভিন্ন জীবাণুঘটিত জটিল সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। 

(৬) আক্রান্ত ব্যক্তিকে তেল, ঘি, গোলমচির কিংবা বিভিন্ন লতাগুল্মজাতীয় পদার্থ খাওয়ানোর মাধ্যমে বমি করানো। 

(৭) আক্রান্ত স্থানে বিষ শোষণকল্পে পাথর, বীজ বা লালা প্রয়োগ করা।



তাহলে আজকের জন্য এইটুকুই , এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মধ্যে share করতে ভুলবেন না।

 আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন। 

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।

সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।


0 comments:

Post a Comment