দাঁতের রোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসা
আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে আমাদের দাঁত। শৈশবে দুধের দাঁত উঠা থেকে তার শুরু। শেষ হয় বার্ধক্যে নড়ে যাওয়ার পরে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে প্রথম কাজ হলো ভালো করে দাঁতমাজা। আসলে নিত্যকার এই কাজটির ভিতরেই দাঁতের যত্ন এবং পরিচর্যা। তা না হলে শুধু দাঁত নড়ে যাওয়া বা পড়ে যাওয়া নয়- দাঁত আমাদের অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে প্রথম কাজ হলো ভাল করে দাঁতমাজা। আসলে নিত্যকার এই কাজটির ভিতরেই দাঁতের যতœ এবং পরিচর্যা। তা না হলে শুধু দাঁত নড়ে যাওয়া বা পড়ে যাওয়া নয়- দাঁত আমাদের অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দাঁতের রোগ : পেরিওডন্টাইটিস
যেসব কারণে পেরিওডন্টাইটিস হতে পারে সেগুলো :
ধূমপান :
ক্রমাগত ধূমপানের কারণে পেরিওডন্টাইটিস হতে পারে এবং এমনকি চিকিৎসার পর ধূমপানের কারণে সফলতার হার কম হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন :
মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মাড়ি বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে এবং মাড়ির প্রদাহ হতে হতে তা ধীরে ধীরে পেরিওডন্টাইটিসের দিকে মোড় নিতে পারে।
ডায়াবেটিস :
যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রানত্ম বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে তাদের ৰেত্রে সংক্রমণসহ পেরিওডন্টাল রোগ হতে পারে।
মানসিক চাপ :
বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, মানসিক চাপের কারণে আমাদের শরীরের পক্ষে সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শরীরের অন্যান্য রোগের মতো পেরিওডন্টাল রোগ ব্যতিক্রম নয়। তাই সবার উচিত মানসিক চাপমুক্ত থাকা।
ঔষধ সেবন :
কিছু ঔষধ সেবন বিশেষ করে বিষণ্নতানাশক ঔষধ এবং হৃদরোগের কিছু ঔষধ মুখের সার্বিক অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। কারণ বিশেষ কিছু ঔষধ সেবনের কারণে লালা নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। লাল মাড়ি এবং দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে। লালা নিঃসরণ কম হলে পেরিওডন্টাইটিস থেকে শুরু করে মুখে যে কোন রোগ দেখা দিতে পারে। তবে এসব রোগ ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে।
জটিল রোগের কারণে :
ক্যান্সার, এইডস জাতীয় জটিল রোগের কারণে মাড়ির যে কোন রোগসহ পেরিওডন্টাইটিসও হওয়া বিচিত্র নয়।
জেনেটিক কারণ :
জেনেটিক কারণে শরীরের কিছু রোগের মতো পেরিওডন্টাইটিস হতে পারে।
পেরিওডন্টাল রোগের লক্ষনসমূহ :
(ক) দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস।
(খ) লাল অথবা ফুলা মাড়ি।
(গ) ব্যথাযুক্ত অথবা রক্তপাতযুক্ত মাড়ি।
(ঘ) কোন কিছু চুষতে ব্যথা হলে।
(ঙ) নড়া দাঁত।
(চ) সংবেদনশীল দাঁত।
পেরিওডন্টাইটিসের চিকিৎসা :
পেরিওডন্টাইটিসে দাঁতে পেরিওডন্টাল পকেট হতে পারে। পেরিওডন্টাল পকেট সাধারণত গভীরতায় ৩ থেকে ৫ মিলিমিটার হতে পারে। তবে তা কোন কোন ৰেত্রে কমবেশি হতে পারে। স্কেলিং এবং রুট স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে পেরিওডন্টাল পকেটের চিকিৎসা করা হয়। প্রাথমিকভাবে স্কেলিং এবং কিউরেট করার পরে পেরিওডন্টাল পকেটে এন্টিসেপটিক চিপ এবং এ্যান্টিবায়োটিক জেল প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তবে এ ৰেত্রে চিকিৎসা সফল না হলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে, যদি স্কেলিং এবং ওষুধ প্রয়োগের পরেও পকেট বিদ্যমান থাকে। এ ৰেত্রে ফ্ল্যাপ সার্জারির (Flap Surgery) মাধ্যমে পেরিওডন্টাল পকেটের চিকিৎসা করা হয় এবং দাঁতের মাড়িকে তার পূর্বের স্থানে বসিয়ে দেয়া হয়। ফ্ল্যাপ সার্জারির (Flap Surgery) পাশাপাশি হাড় এবং কোষের সংযোজন প্রয়োজন হতে পারে।
তাই দাঁত এবং মাড়ির যে কোন রোগ অবহেলা না করে চিকিৎসা করতে হবে দ্রুত।
দাঁত ব্যথার অন্যতম কারণ হল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়। অনেকের কাছে এই রোগটি দাঁতের পোকা নামে পরিচিত। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো ভিত্তি নেই।দাঁতের সব রোগের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি হয়।
বর্তমানে দাঁত ক্ষয় ও দাঁতে ছিদ্র হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত শিশু, টিনএজার ও বয়স্কদের এই সমস্যাটি বেশি হতে দেখা যায়।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলেই দাঁত ক্ষয় হয়ে থাকে। ঘন ঘন স্ন্যাক্স ও ড্রিঙ্কস খাওয়া, অনেকক্ষণ যাবত দাঁতের মধ্যে খাবার লেগে থাকা, ফ্লোরাইড এর অপর্যাপ্ততা, মুখ ড্রাই থাকা, মুখের স্বাস্থ্যবিধি না মানা, পুষ্টির ঘাটতি এবং ক্ষুধামন্দার সমস্যা থাকা ইত্যাদি কারণে দাঁতে ছিদ্র ও দাঁত ক্ষয় রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণ সমূহ:--
দাঁতে প্রচন্ড ব্যাথা হয়
কোন কিছু খাওয়া বা পান করার সময় হালকা থেকে তীব্র ব্যাথা হয়
আক্রান্ত দাঁতে গর্ত দেখা যায় এবং
দাঁতের উপরে সাদা, কালো বা বাদামী দাগ দেখা যায়।
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করা না হয় তাহলে ইনফেকশন বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাথা ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে এবং দাঁতটি হারানোর সম্ভাবনা ও দেখা দিতে পারে। ক্যাভিটির চিকিৎসায় দাঁতে ফিলিং করা হয় ও ক্যাপ পরানো হয় এবং দাঁতের অবস্থা খুব খারাপ হলে রুট ক্যানেল করা হয়। এই সব চিকিৎসা খুব ব্যায় বহুল এবং কষ্টদায়ক।
ঘরোয়া কিছু উপায়ে দাঁতের ব্যাথা কমানো যায়। জেনে নিন সেই উপায় গুলো সম্পর্কেঃ
১। হলুদ গুঁড়ো
দাঁতের ছিদ্রের সমস্যায় হলুদ গুঁড়ো ব্যাবহার খুবই উপকারি। হলুদে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী উপাদান আছে যা দাঁতের ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন কে ধ্বংস করতে পারে এবং এর প্রদাহ রোধী উপাদান দাঁতের ব্যাথা উপশম করতে পারে। হলুদ গুঁড়া ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং আস্তে আস্তে ব্যাথার দাঁতে লাগান,ব্যাথা কমে যাবে।
২। পেঁয়াজ
পেঁয়াজের একটি স্লাইস আক্রান্ত দাঁতের উপরে চেপে রাখুন দাঁতের ব্যাথা কমে যাবে। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে দাঁত ক্ষয় এর সমস্যা কমায়। নিয়মিত পেঁয়াজ দেয়া খাবার খেলে দাঁত ক্ষয় সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
৩। লবণ
লবনে অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে, যা মুখে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ব্যাহত করে প্রদাহ কমাতে ও ব্যাথাকে সহনীয় করতে সক্ষম। ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ টেবিল চামুচ লবণ মিশিয়ে মুখে নিয়ে ১ মিনিট রাখুন এবং আক্রান্ত দাঁতের প্রতি মনোযোগ দিন।এভাবে দিনে ৩ বার করে করুন ব্যাথা কমে যায়। এছাড়াও ১ টেবিল চামুচ লবণ অল্প সরিষার তেলের সাথে অথবা লেবুর রসের সাথে মিসিয়ে পেস্ট তৈরি করে মাড়িতে ম্যাসাজ করুন কয়েক মিনিট। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করে নিন। এভাবে দিনে ২ বার করে কয়েকদিন করুন, ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে।
এছাড়াও বেকিং সোডা, অ্যালোভেরা, লবঙ্গ, রসুন, পুদিনা, আপেল সিডার ভিনেগার ইত্যাদি ব্যবহার করেও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ও দাঁতের ব্যাথা কমানো যায়। সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করুন। দাঁত পরিষ্কার করতে ফ্লস ব্যবহার করুন এবং প্রতিদিন জিহ্বা পরিষ্কার করুন।
তাহলে আজকের জন্য এইটুকুই , এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মধ্যে share করতে ভুলবেন না।
আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন।
আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।
সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।
0 comments:
Post a Comment