***** HEALTH IS WEALTH *****

“I believe that the greatest gift you can give your family and the world is a healthy you.” – Joyce Meyer

**CONNECT US TO GET HEALTH TIPS DAILY ***

“Good health is not something we can buy. However, it can be an extremely valuable savings account.” – Anne Wilson Schaef

**YOUR FITNESS IS YOUR GREATEST WEALTH**

“A fit body, a calm mind, a house full of love. These things cannot be bought – they must be earned.” – Naval Ravikant

** FOLLOW US TO GET DAILY HEALTH BLOGS ***

“If you're happy, if you're feeling good, then nothing else matters.” – Robin Wright

**** THANK YOU ****

THANK YOU FOR YOUR CONTINUOUS HEALTH AND SUPPORT

bengalilifestyle

Friday, November 18, 2022

কালাজ্বর

 

হ্যালো বন্ধুরা । আমাদের জীবন আনন্দ, সুখ দুঃখ হাসি ও কান্নার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এর মধ্যেই রয়েছে রোগ ব্যাধি ও জড়ার উপস্থিতি।
বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যানে বেশিরভাগ রোগই নিরাময় করা সম্পূর্ণ ভাবে সম্ভব, কিন্তু বেশকিছু রোগের চিকিৎসা আজও অজানা !
আমাদের এই লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও তাদের নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।


কালাজ্বর (Visceral leishmaniasis) বা Black fever একটি পরজীবী ঘটিত দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী রোগ যা লেইসম্যানিয়া ডনোভানী (Leishmania donovani) নামক এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবীর সংক্রমনের মাধ্যমে ছড়ায় এবং বেলেমাছির কামড়ের সাহায্যে এটি বিস্তার লাভ করে। প্রথমে এটি মানুষের রক্তের ম্যাক্রোফেই দ্বারা বাহিত হয়ে অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে লিভার, প্লীহা ও অস্থিমজ্জা আক্রান্ত করে বংশ বৃদ্ধি করে। এ রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ২মাস থেকে ৬মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ম্যালেরিয়ার পরে এটিই পরজীবী ঘটিত রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। সময়মতো এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে কালাজ্বরে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের লক্ষণসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিষণ্ণতা বা অবসাদ, জ্বর, ওজন হ্রাস পাওয়া, শরীরে ক্ষত, চামড়া কালচে হওয়া, কলিজা ও প্লীহার আকার বৃদ্ধি, রক্তশল্পতা ইত্যাদি। সাধারনত গ্রামীণ এলাকা সমূহে কালা জ্বর একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা।

কালা জ্বর সাধারনত বেলে মাছির কামড়ে ছড়ায়। বেলে মাছি ঘর এবং ঘরের আশপাশের ফাটলে বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে এবং আর্দ্র মেঝে, দেয়াল, কাঠের আসবাবপত্রের ফাটল, উইপোকার গর্ত, ভাঙ্গা ইট পাথরের নিচে এবং ঘরের আশপাশের ঝোঁপঝাড়ের ভিতর দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে। এরা সাধারনত সন্ধ্যা থেকে ভোঁর পর্যন্ত সময়ে বেশি কামড়ে থাকে। কেবল মাত্র স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছি এ রোগ ছড়ায়। স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছি এদের ডিমের পরিপক্বতার জন্য পশু, পাখী এবং মানুষের রক্ত গ্রহন করে থাকে।

কালাজ্বরের কারণ

বেলে মাছির কামড়ের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশ করে। রোগ সৃষ্টি করতে জীবাণুবাহিত স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছির একটি কামড়ই যথেষ্ট। এটি শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশের আগ পর্যন্ত প্রায় দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর তা রক্তের লোহিত কণিকাকে আক্রান্ত করে এবং সেখানে বংশবৃদ্ধি শুরু করে। ফলে লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে যায় এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বেলে মাছি সাধারনত নোংরা পরিবেশে বসবাস করে, বিশেষ করে যাদের বাড়িতে গরু আছে সেখানে বেশি থাকে।

কালা জ্বর  কাদের হতে পারে

কালাজ্বর প্রবল এলাকা ভ্রমন করলে অথবা ঐসব এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের  কালাজ্বর  হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ছোট বড় যেকোনো বয়সের মানুষেরই এ রোগ হতে পারে।

কালাজ্বর কিভাবে ছড়ায়

স্ত্রী বেলে মাছির (Phlebotomus Sand Fly) কামড়ে মানুষের শরীরে কালা জ্বরের জীবাণু ছড়ায়।

সাধারনত কালাজ্বরের জীবাণুবাহী মাছি সন্ধ্যায় এবং রাতে সবচেয়ে বেশি কামড়ায়। তবে অনেক সময় ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করার সময় বা জঙ্গলে এরা দিনের বেলাও কামড়াতে পারে।

স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছি একবার কামড়ালেই এ রোগ হতে পারে। সাধারনত কামড়ানোর দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে রোগের সংক্রমণ ঘটে।

কালা জ্বরের লক্ষণ

প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর খুব আস্তে আস্তে শুরু হয় এবং জ্বর ৫ থেকে ৭ দিন ধরে উঠতে থাকে।

রোগীর শারীরিক দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। রোগী অসুস্থ বোধ করে এবং ওজন  ক্রমশ কমতে থাকে।

অজীর্ণতা এবং ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

জ্বর অবিরাম থাকতে পারে আবার দিনে দুইবারও আসতে পারে। কিছুদিন পর আবার জ্বর আসে।

প্লীহা এবং যকৃত বৃদ্ধি পায়। প্রথমে প্লিহা নরম থাকে এবং পরে তা শক্ত হয়ে যায়।

হাত, পা, মুখমণ্ডল ও পেটের ত্বক কালো বর্ণ ধারণ করে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জ্বর থাকলে এবং লক্ষণ দেখে ম্যালেরিয়া নাশক ও এন্টিবায়েটিক জাতীয় ওষুধ সেবনেও কোন কাজ না হলে, এটা কালা জ্বর হতে পারে বলে ধারনা করা হয়। রোগ নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা কিংবা অস্থিমজ্জা, প্লীহা অথবা লসিকানালী থেকে নমুনা নিয়ে তার মধ্যে কালাজ্বরের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা করা হতে পারে। আবার রেপিড ডায়াগনস্টিক টেস্টের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে অতি সহজেই কালাজ্বর রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

চিকিৎসা

কালাজ্বরের কোন প্রতিষেধক নেই। কালা জ্বর হয়েছে সন্দেহ হলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ শনাক্ত করার পর তার পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। বর্তমানে এ রোগের চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল মিল্টেফোসিন বাংলাদেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটা সরকারিভাবে বিনামূল্যে দেয়া হয়। এছাড়াও সোডিয়াম এন্টিমনি গ্লুকোনেট ( যা খুব অল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়) এবং অ্যামফোটেরিসিন বি ডিঅক্সিকোলেট এই ওষুধ দুটিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- যে মায়েরা বাচ্চাকে দুধ পান করায়, দুই বছরের নিচের শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বিবাহিত মহিলা যারা নিয়মিত গর্ভনিরোধ ওষুধ গ্রহণ করে না কিংবা অধিক রক্তশূন্যতা, যক্ষ্মা, এইডস বা অন্য কোন জটিল রোগসহ কালাজ্বরের রোগী ইত্যাদি।

কালাজ্বর প্রতিরোধে করনীয়

বেলে মাছি যাতে বংশ বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য মাটির মেঝে বা দেয়াল ফাটলহীন ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং অবশ্যই মানুষের থাকার ঘর গোয়াল ঘর থেকে কিছুটা দূরে স্থাপন করতে হবে।

বেলেমাছি নিধনের জন্য ডিডিটি বা ম্যালাথিয়ন ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড়, নোংরা স্থান, ড্রেন, গরুর ঘর অথবা মাটির ঘরের দেয়ালের ফাঁকে নির্দিষ্ট সময় পরপর জীবাণুনাশক স্প্রে করে এই রোগ থেকে আমরা নিজেদের নিরাপদে রাখতে পারি।

সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সময়ে অযথা বাইরে না যাওয়াই ভাল। কারন- এই সময় মাছিগুলো সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। তাই, বাহিরে যাওয়ার একান্ত প্রয়োজন হলে, শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে, বড় হাতার শার্ট এবং বড় প্যান্ট অথবা লুংগি। বেশি সুরক্ষার জন্য মোজাও পড়তে পারেন।

বেলে মাছির (Phlebotomus Sand Fly) আকার মশার থেকেও ছোট। তাই ছোট একটি ফাঁক দিয়েও মাছি অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে। তাই, দরজা ও জানালায় নেট ব্যবহার করতে হবে এবং ঘরের দেয়ালে কোন ফুটো থাকলে তা অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী ব্যবহার করতে হবে এবং ভালো করে গুঁজে দিতে হবে। মাঝে মাঝে ঘরের চারপাশে জীবাণুনাশক ঔষধ স্প্রে করতে হবে।

সবশেষে

যেহেতু শুধুমাত্র স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছির কামড়ে এই রোগ হয় এবং একবার কামড় দিলেই এ রোগ হতে পারে। তাই, অবশ্যই বাসা বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং বাসার আশেপাশে কোন ময়লা বা ঝোপঝাড় হতে দেয়া যাবে না। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। আবার কালা জ্বর একবার হয়ে থাকলেও আবার হতে পারে। তাই কালা জ্বর প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।


তাহলে আজকের জন্য এইটুকুই , এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মধ্যে share করতে ভুলবেন না।
 আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন। 

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।

সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।

Thursday, November 17, 2022

ম্যালেরিয়া-রোগের-কারণ-লক্ষণ-রোগ-নির্ণয়-চিকিৎসা-ও-প্রতিরোধের-উপায়-malaria

 


ম্যালেরিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ,রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়।

ম্যালেরিয়া হল Anopheles মশকী বাহিত ও বিশেষ ধরনের পরী । আদ্যপ্রাণী দ্বারা সৃষ্ট মানবরােগ । ম্যালেরিয়া রােগের ক্ষেত্রে সংক্রামিত ব্যক্তির কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে ও কয়েক ঘণ্টা পরে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায় । প্রিহ । আকারে বৃদ্ধি পায় ও রক্তাল্পতা দেখা দেয় । ইতালীয় ভাষায় mala = bad বা দূষিত ও aria = air বা বায়ু । অথাৎ malaria শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল দূষিত বায় ।Dr . Laveran ( 1880 ) সর্বপ্রথম মানুষের রক্তে ম্যালেরিয়া পরজীবীর উপস্থিতি লক্ষ করেন । Patric Manson ( 1894 ) উল্লেখ করেন যে , মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রােগের বিস্তার ঘটে ।


  •  মানবদেহে ম্যালেরিয়া রােগ সৃষ্টি হয় Plasmodium গণের অন্তর্গত চারটি প্রজাতি ( species)এর পরজীবী আদ্যপ্রাণীর সংক্রমণের ফলে ।

 রোগের লক্ষণ ( Symptoms of disease ) :


  •  প্রচণ্ড মাথাব্যথা এবং  হাত ও পায়ে মারাত্মক বেদনা হয় । 
  •  অত্যন্ত ঠান্ডার অনুভূতি সহযােগে কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে ।
  •  ও প্লিহা আকারে বৃদ্ধি পায় , এই লক্ষণকে  স্পিনােমেগালি বলে । 
  • রােগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহে অধিক সংখ্যায় RBC বিদীর্ণ হওয়ায় হিমােলাইটিক অ্যানিমিয়া দেখা দেয় ।
  • মাঝে মাঝে ঘাম হয় । 
  • ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয় ।


 ফেব্রাইল পারঅক্সিজম ( Febrile paroxysm ) : 

ম্যালেরিয়া জ্বরের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা দেখা যায় — এদের একত্রে ফেব্রাইল পারক্সিজম বলে 

 [ i ] শীতাবস্থা : ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব করে ও পরে তার কাপনি দিয়ে জ্বর আসতে শুর আসে । এইসময় দেহের তাপমাত্রা সাধারণত 39 - 40°C হয় । সেইসঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয় । এই অবস্থাকেই শীতাবস্থা বলে । এই অবস্থা সাধারণত 20 মিনিট থেকে 1 ঘণ্টা স্থায়ী হয় । ।

 [ 2 ] উত্তাপ অবস্থা ও শীতাবস্থার পরে ম্যালেরিয়া রােগীর দেহের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে সাধারণত 41 . 5°C বা তার বেশি হয় । এই সময়কালকে উত্তাপ অবস্থা বলে । এই অবস্থায় মাথাব্যথা ও বমি বমিভাব দেখা দেয় । এই অবস্থাটি সাধারণত 1 - 4 ঘণ্টা স্থায়ী হয় । 

 [ 3 ] ঘর্ম  অবস্থা; উত্তাপ অবস্থার পরে ম্যালেরিয়া রােগীর প্রচণ্ড ঘাম হয় এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায় । একে ঘর্মাবথা বলে । এই অবস্থা 2 - 3 ঘণ্টা স্থায়ী হয় ।


ইনকিউবেশন পিরিয়ড : Plasmodium - এর স্পােরােজয়েট কোনাে সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করার কয়েকদিন পরে ম্যালেরিয়া রােগের এর লক্ষণ প্রকাশ পায় । এই সময়কালকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে । 


রােগ সংক্রমণ ( Transmission of disease ) 


Plasmodium মানুষ ( গৌণ পােষক ) ও Anopheles মশকী ( মূখ্যপােষক ) - র মাধ্যমে জীবনচক্র সম্পন্ন করে । এই জীবনচক্র সম্পাদনের সময় এরা মানবদেহে ম্যালেরিয়া রােগের সংক্রমণ ঘটায় । চারটি ভিন্ন প্রজাতির Plasmodium গণের পরজীবী আদ্যপ্রাণীর সংক্রমণের ফলে মানবদেহে চার ধরনের ম্যালেরিয়া দেখা দেয় । এগুলির জীবনচক্র মূলত একরকম হলেও কিছুকিছু পার্থক্যও লক্ষ করা যায় ।



বিস্তার পদ্ধতি ( Process of transmission ) 


ম্যালেরিয়া রােগ কোনাে রােগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে প্রধানত নিম্নলিখিত তিনটি পদ্ধতিতে কোনাে সুস্থ ব্যক্তির দেহে বিস্তার লাভ করতে পারে । 

জৈবিক বাহকের মাধ্যমে বিস্তার : প্রধানত স্ত্রী Anopheles মশা ম্যালেরিয়ার জৈবিক বাহক হিসেবে কাজ করে । এরা ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে রােগের বিস্তার করে । 

 রক্তসঞ্চারণের সময় বিস্তার : ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত কোনাে ব্যক্তির দেহ থেকে কোনাে সুস্থ ব্যক্তির দেহে রক্তসঞ্চারণ করা হলে ম্যালেরিয়ার পরজীবী সরাসরি সুস্থ ব্যক্তির দেহে বিস্তার লাভ করে ।

 জন্মগত বিস্তার : গর্ভাবস্থায় মা ম্যালেরিয়া রােগে আক্রান্ত হলে , মায়ের রক্ত থেকে Plasmodium অমরার মধ্যে দিয়ে গর্ভস্থ ভ্রুণের দেহে প্রবেশ করে । সেক্ষেত্রে শিশুর দেহে রােগবিস্তার ঘটে ।


 রােগ প্রতিকারের পদ্ধতি ( Prophylaxis of disease 



 ম্যালেরিয়া রােগ প্রতিরোধ: ম্যালেরিয়া রােগের প্রতিরােধের কয়েকটি উপায় হল নিম্নরূপ । 


  1. মশার নিয়ন্ত্রণ : মশার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি নীচে আলােচিত হল । 



  • মশার প্রজননক্ষেত্র দুরীকরণ : মশার আদর্শ প্রজননক্ষেত্র হল খানা , ডােবা , নালা - নর্দমা ইত্যাদি বদ্ধ জলাশয় । এ ছাড়াও বর্ষাকালে বাড়ির আনাচে - কানাচে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পাত্র বা কৌটো এবং গর্তের মধ্যে জমে থাকা জলে মশকী ডিম পাড়ে । তাই এই সমস্ত বদ্ধ । জায়গায় যাতে জল না জমে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । 

  •  রাসায়নিক দমন : যে সমস্ত জলাশয়ে মশকী সচরাচর ডিম পাড়ে । সেখানে মাঝে মাঝে কেরােসিন , পেট্রোলিয়াম , মবিল ইত্যাদি প্রয়ােগ করতে হবে । এতে জলের ওপর আস্তরণ তৈরি হয়ে মশার লাভা ও পিউপা ধ্বংস করা যায় । 

  • পানামা লার্ভিসাইড ও প্যারিস গ্রিন হল তীব্র লার্ভানাশক পদার্থ এগুলি প্রয়ােগ করে মশার লার্ভা ও তাদের খাদ্য ধ্বংস করা যায় । 

  •  মশার আবাসস্থলে বিভিন্ন কীটনাশক পদার্থ ।  যেমন — DDT ( dichloro - diphenyl - trichlor - 0ethane ) , BHC ( benzene hexachloride ) ইত্যাদি  স্প্রে করা হলে পরিণত মশা ধ্বংস হয় । ও S02 ধোঁয়া প্রয়ােগ করেও একসঙ্গে অনেক মশা  মেরে ফেলা যায় । 


2.জৈবিক দমন : 

  • কিছুকিছু মাছ [ যেমন — গান্থসিয়া ( Gambusia affinis ) , গােল্ডফিশ ( Carassius aratus aratus ) , গাপ্পি । ( Lebistes reticultus ) ইত্যাদি মশার লার্ভা ও পিউপাকে দ্রুত ভক্ষণ করে । এদের লার্ভাভক বা লার্ভিসাইডাল মাছ বলে । জলাশয়ে এইসব । মাছ চাষ করা হলে মশার বংশবিস্তার রােধ করা যাবে । 

  •  হাইড্রা - ( Hydra sp . ) নামক অমেরুদণ্ডী প্রাণী মশার লার্ভা ও পিউপা ভক্ষণ  করে তাদের ধ্বংস করে । mosquito repellent যন্ত্র ব্যবহার করা হয় । এই যন্ত্র থেকে নির্গত আন্ট্রাসােনিক শব্দ মশাকে প্রায় 3m দূরে রাখে ।

3. জিনগত নিয়ন্ত্রণ : সুপ্রজননবিদ্যা ( genetics ) র অগ্রগতি মশা দমনের ক্ষেত্রেও উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে । ভারতবর্ষের কিছুকিছু অঞ্চলে WHO এবং ICMR ( Indian Council of _ Medical IResearch ) - এর যৌথ উদ্যোগে মশার নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরুষ মশাকে ধরে রাসায়নিক পদার্থ বা রশ্মি প্রয়ােগ করে প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে । দেওয়া হয় । এরপর এদের ছেড়ে দেওয়া হয় । 

4.ব্যক্তিগত সুরক্ষা : প্রধানত স্ত্রী Anopheles মশার দংশনের মাধ্যমেই এই রােগ হয় । তাই মশার দংশন থেকে ব্যক্তিগতভাবে রক্ষা পাওয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা উচিত ।


  •  দিনের বেলায় ঘরের আসবাবপত্রের পিছনে , পােশাক - পরিচ্ছদে ও অন্ধকার স্থানে মশা । লুকিয়ে থাকে । তাই ঘরের অন্ধকার স্থান আলােকিত ও পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার 

  •  ঘরের দরজা - জানালায় সক্ষা তারের জাল লাগিয়ে মশাকে বিতাড়িত করা যেতে পারে । 

  •  যে সমস্ত অঞ্চলে মশার প্রাদুর্ভাব বেশি , সেখানে বিশেষত সন্ধ্যার দিকে দেহের অধিকাংশ অংশ পােশাক - পরিচ্ছদ দ্বারা আবৃত রাখা উচিত । লাগানাে উচিত ।
  •  ঘরে বিভিন্ন মশা বিতাড়ক ধূপ ও স্প্রে ব্যবহার । করেও মশার দংশন থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে ।

 5.টিকাকরণ : ম্যালেরিয়া - প্রবণ অঞ্চলের মানুষকে ম্যালেরিয়ার টিকা প্রদানের মাধ্যমেও ম্যালেরিয়া প্রতিরােধ সম্ভব ।

রােগ নির্ণয় :


কোনো ব্যক্তির কয়েকদিন ধরে জ্বর না সারলে বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে , ওই ব্যক্তির রক্তপরীক্ষা করতে হবে । পরীক্ষায় । ম্যালেরিয়ার পরজীবী পাওয়া গেলে বােঝা যাবে যে , ওই ব্যক্তি ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত হয়েছে । এ ছাড়াও ফ্লুওরােসেন্স মাইক্রোস্কোপিক টেস্ট ও ইমিউনােক্রোমাটোগ্রাফিক টেস্ট - এর মাধ্যমেও কোনাে ব্যক্তি ম্যালেরিয়া । রােগাক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করা যায় ।


চিকিৎসা পদ্ধতি :


 পূর্বে ম্যালেরিয়া রােগের চিকিৎসায় সিঙ্কোনা গাছের কাণ্ডের  ছাল থেকে প্রাপ্ত কুইনাইন নামক উপক্ষার ( alkaloid ) ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হত । এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় বর্তমানে ম্যালেরিয়া রােগের চিকিৎসায় ক্লোরােকুইন , কেমােকুইন , প্লাসমােকুইন , পেন্টাকুইন ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা হয় ।

ডেঙ্গু এবং এর সাধারণ লক্ষণগুলির কারণ কী?

 


পরিদর্শন

ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। এটি বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণ। এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ে এটি হয়ে থাকে। এটি তখনই ঘটে যখন মশা একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় এবং তারপর ভাইরাস বহন করার সময় একটি অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়।

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে

ডেঙ্গু জ্বর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় দেশগুলিতে দেখা দেয়। এটি ক্যারিবিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। হালকা ডেঙ্গু জ্বর উচ্চ জ্বর এবং ফ্লু-এর মতো উপসর্গ এবং ডেঙ্গু জ্বরের গুরুতর রূপ, যা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার নামেও পরিচিত, মারাত্মক রক্তপাত, রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া (শক) এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

ডেঙ্গু সংক্রমণের লক্ষণগুলো কী কী?

লক্ষণগুলি সাধারণত মশার কামড়ের 4-7 দিন পরে দেখা যায় এবং 10 দিন স্থায়ী হতে পারে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে, লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সবসময় দেখা যায় না, বিশেষ করে হালকা সংক্রমণের ক্ষেত্রে।

সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ অন্তর্ভুক্ত:

  • 104-ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উচ্চ জ্বর। এটা হঠাৎ ঘটতে পারে।
  • প্রচন্ড মাথাব্যথা.
  • বমি বমি ভাব এবং বমি.
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি।
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
  • শরীরে ব্যথা, হাড়, জয়েন্টে ব্যথা।
  • নাক বা মাড়ি থেকে রক্তপাত। এটি বেশিরভাগই হালকা।
  • ত্বকে সহজে ক্ষত। কখনও কখনও, ত্বকের নীচে সূক্ষ্ম পাত্রগুলি ক্ষতের মতো দেখা দেয়। এটি কোনো আঘাত ছাড়াই ঘটতে পারে।
  • ক্লান্তি
  • চোখের মণির পিছনে ব্যথা।

শিশু এবং অল্প বয়স্কদের মধ্যে, সংক্রমণ বেশিরভাগই হালকা থাকে এবং লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি প্রায়শই ভাইরাল ফ্লাসের সাথে বিভ্রান্ত হয়। এটি নিজে থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায়। যখন ব্যক্তি জীবনে প্রথমবার সংক্রমিত হয় তখন এটি হালকা হয়।

বয়স্ক শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে লক্ষণ:

যাইহোক, ডেঙ্গু জ্বর বয়স্ক শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করে। এটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (DSS) নামে পরিচিত। নিম্নলিখিত ডিএসএস এর সাধারণ লক্ষণগুলি দেখা যায়:

  • মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
  • ক্ষতিগ্রস্থ রক্তনালী।
  • রক্তনালী থেকে রক্ত বের হওয়া।
  • বমি, প্রস্রাব এবং মলে রক্ত।
  • লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের ক্ষতি।
  • রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়।
  • যকৃতের বৃদ্ধি।
  • পেটে প্রচণ্ড ব্যথা।
  • ঠান্ডা এবং ফ্যাকাশে চেহারা চামড়া (শক কারণে)।
  • নাক ও মাড়ি থেকে রক্তপাত।
  • সংবহনতন্ত্রের ব্যর্থতা।
  • খিটখিটে এবং অস্থির আচরণ।
  • শ্বাস নিতে অসুবিধা, দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে পরিচালিত করে।
  • লক্ষণগুলি ব্যাপক রক্তপাত, শক এবং মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

আপনার যদি উপরের উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি থাকে তবে আপনার ডাক্তারকে কল করুন এবং ডেঙ্গুর জন্য পরীক্ষা করুন। আপনি যদি গুরুতর পেটে ব্যথা, শ্বাস নিতে অসুবিধা, বমি বা রক্তপাতের মতো গুরুতর লক্ষণগুলির মধ্যে কোনোটি লক্ষ্য করেন তবে জরুরি যত্নের জন্য কল করুন।

এছাড়াও, আপনি যদি এমন এলাকায় থাকেন যেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে বা সম্প্রতি কোনো গ্রীষ্মমন্ডলীয় বা উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে ভ্রমণ করেছেন তাহলে এই লক্ষণগুলির উপর নজর রাখুন। ডেঙ্গু সন্দেহ হলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন।

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ডেঙ্গু ভাইরাস। ডেঙ্গু জ্বর চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনো একটির কারণে হয়ে থাকে যা মশার কামড়ের মাধ্যমে রোগীর শরীরে ছড়ায়। স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে এবং সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে বহন করে।

যদি কারও পূর্বে ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়ে থাকে, তবে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে তাদের গুরুতর জটিলতা এবং ডিএসএস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জীবদ্দশায় সংক্রমণের সংখ্যা যত বেশি, গুরুতর জটিলতার সম্ভাবনা তত বেশি।

এটা কিভাবে চিকিত্সা করা হয়?

রোগের জন্য কোন নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিত্সা নেই। শুধুমাত্র লক্ষণীয় এবং সহায়ক চিকিৎসা আছে, তবে এটি গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার শরীর সাধারণত ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে দুর্বল থাকে এবং সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করতে এবং জটিলতার উদ্ভব রোধ করতে সহায়তার প্রয়োজন হয়। যেহেতু ডেঙ্গু জ্বরের কারণে শরীরে ব্যথা হয়, এবং এটি জ্বরকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে, এটি অ্যাসিটামিনোফেন-ভিত্তিক ব্যথানাশক দিয়ে চিকিত্সা করা হয়। আপনার অ্যাসপিরিন গ্রহণ করা এড়ানো উচিত কারণ এটি রক্তপাত বাড়াতে পারে, যদি থাকে।

নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। আপনার জ্বর কমে যাওয়ার পরে আপনার ভাল বোধ করা উচিত। যদি আপনার ক্ষেত্রে এটি না হয় তবে হাসপাতালে যান।

আপনার যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর থাকে, তাহলে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং শিরায় তরল সহ প্লেটলেট বা অন্যান্য রক্তের দ্রব্য স্থানান্তরের পাশাপাশি রক্ত ​​পরীক্ষা এবং রক্তচাপের জন্য পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। যদি আপনার ডাক্তার অন্যান্য বিরল জটিলতার সন্দেহ করেন, তবে আপনাকে বিশেষায়িত পরীক্ষার জন্য নেওয়া হতে পারে যেমন আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি, এমআরআই ইত্যাদি। হাসপাতালে ভর্তি কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।


আমরা কিভাবে এটা প্রতিরোধ করতে পারি?

শুধুমাত্র একটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন এখনও অনুমোদিত হয়েছে, যা ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া নামে পরিচিত কিন্তু এটির সুবিধার প্রমাণ না থাকায় এটি এখনও ভারতে উপলব্ধ নয়। এটি 9-45 বছর বয়সী ব্যক্তিদের 12 মাসের মধ্যে 3 ডোজে দেওয়া হয়।

বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের অন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। গবেষকরা এটি নিয়ে কাজ করছেন। ডেঙ্গু জ্বরের কারণগুলোকে প্রতিরোধই একমাত্র প্রতিরোধ। মশার বংশবৃদ্ধি এবং মশার কামড় প্রতিরোধ করা উচিত, বিশেষ করে যদি আপনার আশেপাশে ডেঙ্গুর পরিচিত ঘটনা থাকে।

আপনাকে মশার কামড় থেকে বাঁচাতে এই কয়েকটি সাধারণ টিপস:

  • পরিপূর্ণ পোশাক পরুন। আপনার ত্বক যতটা সম্ভব ঢেকে রাখুন, বিশেষ করে যদি আপনি বাইরে যাচ্ছেন। এছাড়াও, সুতি, লিনেন বা ডেনিমের মতো মোটা কাপড় পরার চেষ্টা করুন। এতে মশার কামড়ের ঝুঁকি কমে যাবে।
  • নিশ্চিত করুন যে জানালায় মশারি ব্যবহার করা হয়েছে। ডেঙ্গু মশা খুব ভোরে বা গভীর সন্ধ্যায় সক্রিয় থাকে। যাইহোক, তারা আপনাকে রাতেও কামড় দিতে পারে। তাই মশারি দিয়ে ঘরের জানালা পাহারা দিতে পারেন।
  • মশা নিরোধক। পারমেথ্রিন মশা তাড়ায়। তাই এটি জামাকাপড়, ক্যাম্পিং তাঁবু ইত্যাদিতে প্রয়োগ করা হয়। ত্বকে প্রয়োগ করতে, 10% DEET ব্যবহার করুন।
  • মশার বংশবৃদ্ধি হ্রাস করুন। এডিস মশা কৃত্রিম পাত্র যেমন বালতি, নারকেলের খোসা ইত্যাদি পানিতে ডিম পাড়ে। মশার বংশবৃদ্ধি এড়াতে, আপনার যে কোনও পাত্রকে ঢেকে রাখা উচিত, নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত এবং আপনার ড্রেনগুলিকে ঢেকে রাখা উচিত।

উপসংহার

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাস দ্বারা হয়। মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বর জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন। আমরা যদি সুরক্ষিত থাকতে চাই তবে আমাদের মশা থেকে নিরাপদ থাকতে হবে। আপনি যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্ক ব্যক্তি হন, তাহলে আপনার জটিলতা সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকা উচিত।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

আমি আমার ডাক্তারকে কি প্রশ্ন করতে পারি?

আপনার বর্তমান উপসর্গের সম্ভাব্য কারণ, আপনাকে যে পরীক্ষা করাতে হবে, চিকিৎসার বিকল্প, পুনরুদ্ধারের সময়, সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন।

আমার ডাক্তার আমাকে কি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে?

আপনার চিকিত্সক আপনাকে লক্ষণ ও উপসর্গগুলির সাথে সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন, যে সময়কালের জন্য আপনার লক্ষণগুলি হালকা, মাঝারি, বা গুরুতর, ইত্যাদি।

চিকুনগুনিয়া (Chikungunya)

 


 হ্যালো বন্ধুরা । আমাদের জীবন আনন্দ, সুখ দুঃখ হাসি ও কান্নার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এর মধ্যেই রয়েছে রোগ ব্যাধি ও জড়ার উপস্থিতি।
বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যানে বেশিরভাগ রোগই নিরাময় করা সম্পূর্ণ ভাবে সম্ভব, কিন্তু বেশকিছু রোগের চিকিৎসা আজও অজানা !
আমাদের এই লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও তাদের  নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।

সামগ্রিক ধারণা

চিকুনগুনিয়া হল আরবোভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি জ্বর। এই ভাইরাসটি আলফাভাইরাস গণভুক্ত এবং টোগাভিরিডে গোত্রভুক্ত। এটি মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জুড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রাদুর্ভাব এর খবর পাওয়া গেছে। পূর্ব আফ্রিকায় হাজার  হাজার 1952সালে এই সংক্রমণ প্রথমবার দেখা গিয়েছিল। 

 হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এটি ভয়াবহ পর্যায়ে গেলে এতে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়, যেমন, হাড়ের যন্ত্রণা, ত্বকের ফুসকুড়ি এবং পেশিতে ব্যথা। অসমর্থ আর্থারাইটিস এবং ফুলে যাওয়া নরম অস্থিসন্ধিও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। ভয়াবহ পর্যায়ে ঘুরে ঘুরে জ্বর আসে, অদ্ভুত রকমের শারীরিক দুর্বলতা দেখতে পাওয়া যায়, প্রদাহ সৃষ্টিকারী পলিআর্থারাইটিস এবং শক্ত হয়ে যাওয়া দেখা যায়। অকিউলার, স্নায়বিক এবং মিউকোট্যানিয়াস।  প্রকাশও লক্ষ্য করা যায়। প্রায় 15% রোগীর ক্রনিক আর্থারাইটিস হয়। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসঘটিত রোগ নির্ণয়ের জন্য ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি অ্যান্টিবডিকে চিহ্নিত করে সেরোডায়াগনস্টিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। 

চিকুনগুনিয়া একটি স্ব-সীমাবদ্ধকারী রোগ হলেও কিছু কিছু সময় নিম্নলিখিত কিছু উপসর্গ দেখাতে পারে, যেমন হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া জ্বর, মেনিঙ্গো-এন্সেফালাইটিস এবং রক্তপাত। চিকেন গুনিয়া রোগের জন্য কোন টিকা উপলব্ধ নেই। এই রোগটি ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, জনগণকে এবং জনস্বাস্থ্য আধিকারিককে শিক্ষিত করে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। 

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের খবর এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ অঞ্চল এবং ভারত মহাসাগর থেকে পাওয়া গেছে। এটি ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং উত্তর আমেরিকাতেও ছড়িয়ে গেছে। 

যেখানে মশা এবং মানুষ উভয়েই এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত, সেখানে এর প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। এই ভাইরাসটি একজন মায়ের থেকে তার সদ্যজাত সন্তানের মধ্যে, এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তির দেহে রক্ত সঞ্চালনের ফলে চলে যেতে পারে। 

কারণ

 চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ হলো এই রোগে মশার কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে যায়।  চিকুনগুনিয়া  ভাইরাসের (CHIKV) প্রধান বাহক হল এডিস ইজিপ্টি অথবা হলুদ জ্বরের মশা। CHIKV আলফা ভাইরাস এবং মশাজাত আর্বোভাইরাস।

মূলত ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এডিস অ্যালবোপিকটাস হল আরেক ধরনের মশার প্রজাতি যারা এর বাহক রূপে পরিচিত। এডিস ইজিপ্টি দিনের বেলায় কামড়ায়। বহু বছর ধরে এডিস মশার বিবর্তন ঘটেছে এবং এটি নিজেদের মানুষকে কামড়ানোর জন্য অভিযোজিত করে ফেলেছে। এমনকি তারা যখন নিচ থেকে মানুষদের আক্রমণ করে, তখন তাদের পাখনার গুনগুন আওয়াজকেও তারা কমিয়ে ফেলেছে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। এই মশাদের সাধারণত শহরাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এডিস মশার প্রজননের জন্য কেবল মাত্র 2 মিলিলিটার জল প্রয়োজন এবং তাদের ডিমগুলি প্রায় এক বছর পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে। বাহক মশা সংক্রমণের ক্ষমতা পরের প্রজন্মেও ঢুকিয়ে দিতে পারে। 

 চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের জীবনচক্র

একটি সংক্রামিত মশার লালার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। যখন একটি সংক্রামিত মশা কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি ব্যক্তির রক্তের ধারার মধ্যে প্রবেশ করে। ভাইরাসটি রক্তে প্রবেশ করার পর এটি গলা নাক এবং মুখে উপস্থিত সমস্ত কোশগুলিকে সংক্রামিত করে। 

এর পরে, ভাইরাসটি  রক্তে বহুগুণিত হয়ে যায় এবং সমস্ত দেহে ছড়িয়ে পড়ে। মশার কামড়ের দুই থেকে বারো দিন পরে উপসর্গগুলি দেখা যায়। সাধারণত অস্থি সন্ধিতে প্রবল ব্যথা, হঠাৎ হঠাৎ জ্বর আসা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি বেরোনো দেখে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে অন্য জ্বরের থেকে পৃথক করা যায়।

মশার ধাপ

যখন কোন মশা একজন সংক্রামিত ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন তার দেহ থেকে মশার দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। এটি তার ডিম্বাশয়, মধ্য অন্ত্র, স্নায়ু কলা এবং চর্বির মধ্যে এর প্রতিলিপি তৈরি করে। তারপর ভাইরাসের জন্ম দেয় এবং মশার লালাগ্রন্থিতে যাত্রা করে। একবার যখন এই সংক্রামিত মশা অন্য কোন ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন এই ভাইরাসটি তার দেহে চলে যায়।

CHIKV এর সঞ্চারণ চক্র

চিকুনগুনিয়ার দুটি সঞ্চরণ চক্র হল প্রাণীবাহিত চক্র এবং আকস্মিক অতিমারী চক্র। 

প্রাণীবাহিত চক্রটি সাধারণত আফ্রিকায় দেখতে পাওয়া যায়। এডিস ফার্সিফার, এডিস টায়লোরি, এডিস আফ্রিক্যানাস অথবা এডিস লুটিওসেফালাস বাহক হিসাবে কাজ করে। সম্ভবত প্রধান প্রাণীবাহিত বাহক হল এডিস ফার্সিফার। এটি মনুষ্য গ্রামে প্রবেশ করে এবং বাঁদর থেকে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে দেয়। 

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস হঠাৎ করে ছড়িয়ে যেতে পারে, শহরাঞ্চলে সঞ্চালন চক্র দুটির উপর নির্ভর করে এ. ইজিপ্টি, এ. অ্যালবোপিকটাস এবং মানুষের বহুগুণিত ধারক। এই মহামারী চক্রের ফলে মানুষের মধ্যে বহুমাত্রায় মশা গঠিত সংক্রমণ ঘটে। এটি মহামারীর সঞ্চারণ এর জন্য আদর্শ। প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী মশা মানব দেহের ওপর খাওয়াতে বেশি পছন্দ করে তারা অনেক সময় একটিমাত্র কোন ট্রাফিক চক্রের মধ্যে অনেকবার রক্ত শোষণ করে। তাদের পছন্দের লার্ভার জন্মস্থান হিসেবে  একটি কৃত্রিম পাত্রে তারা লার্ভার জন্ম দেয় এবং মানুষের শরীরে যাওয়ার জন্য সুরক্ষিত স্থানে বসে বিশ্রাম করে। মানুষ উচ্চ-টিটার ভিরেমিয়া তৈরি করে যা সাধারণত উপসর্গগুলির প্রকট হবার প্রথম চার দিনে দেখা যায়।

উপসর্গ

একজন ব্যক্তির চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হবার পরে উপসর্গগুলি দেখা যাওয়া পর্যন্ত এর উন্মেষপর্ব চলতে থাকে। এটা এক থেকে বারো দিনের মধ্যে হতে পারে। জ্বর সাধারণত দুই বা তিন নম্বর দিন থেকে শুরু হয়।

চিকুনগুনিয়া রোগের এবং উপসর্গগুলি নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে একটি বা একাধিক গুলি দিয়ে শুরু হয়: জ্বর, ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাওয়া, বমি করা, মাথা ঘোরা, অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা, মাথা যন্ত্রণা। রোগীর সাধারণত 100 থেকে 104 ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর থাকে। এই উপসর্গগুলির পাশাপাশি হঠাৎ করে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায়। 

চিকুনগুনিয়ার মূল শারীরিক উপসর্গগুলি হল নিম্নলিখিত

  • চোখে লালচে ভাব:  এই রোগী মূলত কনজাংটিভাইটিসে ভোগেন। 
  • মাথা যন্ত্রণা:  চিকুনগুনিয়ার একটি খুব সাধারণ উপসর্গ হলো প্রচণ্ড এবং ঘন ঘন মাথা যন্ত্রণা, যেটা কয়েকদিন ধরে টানাও থাকতে পারে। 
  • প্রচণ্ড যন্ত্রণা এবং শরীরে ব্যথা: এই ধরনের ব্যথা খুবই ঘন ঘন হয় এবং যত দিন বাড়তে থাকে, এই ব্যথাও বাড়তে থাকে। কখনো কখনো অতিরিক্ত যন্ত্রণার কারণে অস্থিসন্ধিগুলিও ফুলে থাকে। 
  • অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ফুসকুড়ি হওয়া: সমগ্র দেহে ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে, যেটা বারবার ফিরে ফিরে আসে
  • রক্তপাত:  যে ব্যক্তি চিকুনগুনিয়ায় ভুগছেন, তার রক্তপাত হওয়ার খুব বেশি ঝুঁকি রয়েছে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলি দেখা যায় তা হল নিম্নলিখিত 

  • ডায়রিয়া
  • রেট্রো-অরবিটাল যন্ত্রণা
  • বমি
  • মেনিঞ্জিয়াল সিন্ড্রোম

ঝুঁকির বিষয়

  • জল পরিবেষ্টিত অঞ্চলে থাকা:  জল দ্বারা পরিবেষ্টিত অঞ্চলে মশারা সক্রিয় ভাবে বসবাস করতে পারে। এই অঞ্চলের লোকদের মধ্যে চিকুন গুনিয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে। মশা জলে ডিম পাড়ে। যে জায়গায় জমা জল রয়েছে যেমন নির্মীয়মান স্থানে এবং বস্তি অঞ্চলে, চিকেন গুনিয়া বেশি দেখা যায়। 
  •  দুর্বল  অনাক্রম্যতা:বয়স্ক মানুষ শিশু এবং গর্ভবতী মহিলার মত যাদের দুর্বল অনাক্রম্যতা রয়েছে, তাদের এই রোগটি ভয়াবহ আকারে হবার সম্ভাবনা আছে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ প্রাণঘাতী হতে পারে, এমনকি এর কারণে বৃক্ক ও যকৃৎ বিকল হতে পারে, প্যারালাইসিস এবং স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। 
  •  বর্ষাকাল:  মশা বর্ষাকালে বেশি জন্ম দেয় এবং বেঁচে থাকে। তাই চিকুনগুনিয়া সহ সবচেয়ে বেশি মশা বাহিত রোগগুলি সাধারণত বর্ষাকাল দেখা যায়।

 রোগ নির্ণয়

  •  চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের জন্য একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা যেমন এনজাইম-লিঙ্কড ইমিউনোসরবেন্ট অ্যাসেস (ELISA) করে IgG এবং IgM চিকুনগুনিয়া-বিরোধী অ্যান্টিবডির অস্তিত্ব নির্ধারণ করে। অসুস্থতা শুরু হবার পরে IgM অ্যান্টিবডির মাত্রা 3 থেকে 5 তম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি থাকে। চিকিৎসার শুরুর কিছু দিনে এই পরীক্ষার উপর নির্ভর করা প্রয়োজন। 
  • উপসর্গ দেখা যাওয়ার পরে প্রথম সপ্তাহে নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ভাইরোলজি পদ্ধতি (আরটি-পিসিআর) অনুসরণ করা হয়। অনেক রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ পলিমারেজ শৃঙ্খল বিক্রিয়া থাকলেও তারা প্রথম কিছুদিনে তেমন সাড়া দেয় না। তাই চিকিৎসাগত রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিতে এই পরীক্ষার ওপর নির্ভর করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাসের জিনোটাইপ নির্ণয় করার জন্য আরটি-পিসিআর পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয় এবং  এভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত নমুনাগুলির মধ্যে তুলনা করা যায়।

 চিকিৎসা

 চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক

  •  পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
  • ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ  পান করুন।
  • ব্যথা এবং জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল এর মতো ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  •  রক্তপাতের ঝুঁকির কারণে অন্যান্য নন-স্টেরয়ডাল প্রতিরোধী ওষুধ এবং অ্যাসপিরিন খাওয়া উচিত নয়। 

যদি কোন ব্যক্তি অন্য রোগের জন্য ইতিমধ্যে কোন ওষুধ খাচ্ছেন, তবে অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারকে তা জানান। 

 প্রতিরোধ

মশার কামড় কম করার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

  • একজন ব্যক্তির সবসময় নিজেকে ঢেকে রাখা উচিত এবং যথাসম্ভব ত্বক কম উন্মুক্ত রাখা উচিত।
  • উন্মুক্ত থাকে তবে মশা নিরোধক ক্রিম লাগানো উচিত।
  • আশেপাশের অঞ্চলকে সবসময়  নজর রাখতে হবে এবং পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • জল জমা বন্ধ করতে হবে।
  • মশার কামড় এড়ানোর জন্য মশারি ব্যবহার করতে হবে।
  • DEET যুক্ত মশা নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।
  • লেমনগ্রাসের মত স্বাভাবিক মশা নিরোধকগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।

CHIKV এর জন্য এখন কোন বাণিজ্যিক টিকা নেই।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

1)  চিকুনগুনিয়া জ্বর কী?

 চিকুনগুনিয়া জ্বর হলো একটি সংক্রামক রোগ যা চিকেন গুনিয়া ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট হয় এবং সংক্রামিত মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়।

2) চিকুনগুনিয়ার  উন্মেষকাল কতক্ষণ?

একজন ব্যক্তির চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হবার পরে উপসর্গগুলি দেখা যাওয়া পর্যন্ত এর উন্মেষপর্ব চলতে থাকে। এটা এক থেকে বারো দিনের মধ্যে হতে পারে।

3)  চিকুনগুনিয়া জ্বরের কি কোন ঋতুগত ধরণ আছে?

 চিকুনগুনিয়া বছরের যে কোনো মাসেই ছড়াতে পারে। রোগের প্রাদুর্ভাব বর্ষা পরবর্তী সময়ে বেশি দেখা যায়।

4) চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গুর মধ্যে তফাৎ কী?

চিকুনগুনিয়া জ্বর অল্পসময়ের জন্য থাকে এবংম্যাকিউলোপ্যাপুলার ফুসকুড়ি প্রচন্ড বেশি থাকে এবং ব্যাপক অস্থিসন্ধি/ হাড়ের ব্যাখ্যা এই রোগে খুবই সাধারণ এবং এটি প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকে। কিন্তু রক্তক্ষরণ এবং শক খাওয়া খুবই বিরল। 

অন্যদিকে ডেঙ্গুতে দীর্ঘসময় ধরে জ্বর থাকে। ডেঙ্গুর জ্বরের সাথে সাথে রক্তক্ষরণসহ জ্বর মাড়ি থেকে রক্তপাত নাক এবং গ্যাস্ট্রো-অন্ত্রে ও ত্বক থেকে রক্তপাত হতে পারে। কিছু বিরল ক্ষেত্রে ডেঙ্গু শকও হতে পারে। 

5) চিকুনগুনিয়া জ্বরের চিকিৎসা কী?

চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক।

তাহলে আজকের জন্য এইটুকুই , এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মধ্যে share করতে ভুলবেন না।
 আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন। 

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।

সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।

পেয়ারা || পেয়ারার ১০টি উপকারিতা



পেয়ারা আমাদের সকলের প্রিয় একটি ফল। স্বাদ, গন্ধ আর পুষ্টিগুণে পেয়ারার তুলনা হয়না। এটি প্রায়ই সব ঋতুতেই খুব কম দামে পাওয়া যায়। পেয়ারার পুষ্টিগুণ আমাদের অনেকেরই অজানা। অথচ এই পুষ্টিকর ফলটি যেমন আমাদের প্রতিদিনের খাবারের অংশ হতে পারে তেমনি আমাদের অনেক অসুখ বিসুখ থেকে বাঁচাতে পারে।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব পেয়ারার ১০টি উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, ঔষধিগুণ  সহ অতিরিক্ত এ ফলটি খেলে এর অপকারিতা কি এবং কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সে সমবন্ধে।

পেয়ারার ১০টি উপকারিতাঃ

পেয়ারার ১০টি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা বর্ননা করা হলো।

১। ডায়রিয়া ভালো করেঃ পেয়ারার পাতা প্রাচীন কাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ৬ টি পেয়ারার পাতা নিয়ে তা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পাতার নির্যাস পান করুন দিনে দুইবার যতদিন না আপনি সুস্থ হন।

২। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ পেয়ারা একটা ভিটামিন সি সম্পুর্ন ফল এবং এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার আছে । আপনি নাস্তা বা হালকা খাবার হিসেবে তৈলাক্ত খাবার না খেয়ে পেয়ারা খেতে পারেন যা আপনার পেট ভরবে কিন্তু মেদ বৃদ্ধি করবে না।

৩। বয়সের ছাপ কমায়ঃ মানুষ যতই সুন্দর হোক না কেন বয়সের সাথে সাথে সবার চামড়াতেই বয়সের একটা ছাপ পড়ে। প্রকৃতির এই নিয়মকে কখনই ঠেকানো যায়না কিন্তু আমরা বয়সের এই ছাপ পড়াকে একটু আটকাতে পারি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেয়ে যা কিনা আমাদের ত্বকের পুনর্গঠনে ভুমিকা রাখে। পেয়ারায় প্রচুর প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম।

৪। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ অনেক ফলে অনেক সুগার থাকে যার ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় কিন্তু পেয়ারা নিয়মিত খেলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের উপরে করা একটি রিসার্চে জানা গেছে।

৫। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ পেয়ারার ডায়েটারি ফাইবার আমাদের ব্লাড ভেসেল এবং আর্টারি পরিস্কার রাখে। এছাড়া পেয়ারা খেলে এটি আমাদের শরীরের সব অঙ্গে স্বাস্থ্যকর রক্ত প্রবাহে সাহায্য করে।

৬। হজমে সাহায্য করেঃ যাদের হজমে সমস্যা হয় তারা পরিমাণ ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা আপনার চামড়া থেকে বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করবে।

৭। মেটাবলিজম বাড়ায়ঃ সুস্থ থাকার জন্য ও এনার্জেটিক থাকার জন্য আমাদের একটি স্বাস্থ্যকর মেটাবলিক সিস্টেম থাকা উচিত। পেয়ারায় প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার ও এন্টি অক্সিদেন্ট আছে যা কঠিন প্রটিনকে ভেঙ্গে আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি করে দেয়।

৮। থাইরয়েডের সমস্যা থেকে আমাদের দূরে রাখেঃ আগেই বলা হয়েছে পেয়ারা আমাদের শরীরের মেটাবলিক সিস্টেমের অনেক সাহায্য করে। আর একটা স্বাস্থ্যকর মেটাবলিক সিস্টেম আমাদের থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাস্থ্যের জন্যও দরকারি।

৯। ক্যান্সার রোধে সাহায্য করেঃ পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টি অক্সিডেন্ট আছে। এইসব উপাদান আমাদের শরীরে টিউমার ও ক্যান্সারের সেল হতে বাঁধা সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত পেয়ারা খান তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার, নিয়মিত পেয়ারা খেলে উপকার পেতে পারেন। এটি যেমন আমাদের সিস্টেমকে পরিস্কার রাখে তেমনি শরীর থেকে ক্ষতিকর অনেক পদার্থ দূর করে আমাদের অনেক অসুখ বিসুখ থেকে দূরে রাখে।

১০। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে আমরা অসুখ বিসুখ ও ইনফেকশনে কতোটা সহজে আক্রান্ত হব। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা খুব সহজেই অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হয়। পেয়ারা নিয়মিত খেলে এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের সহজে অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে রাখে।

পেয়ারার ঔষধিগুণঃ

পেয়ারার ভিটামিন সি এবং আয়রন সর্দি , কাশি এবং জ্বরে উপশমে সহায়তা করে।

পেয়ারা এর ভিটামিন বি৩ এবং বি৬ মস্তিস্কের জন্য উপকারী ।

পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন-এ চোখের জ্যোতি বৃধি করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক

পেয়ারার মধ্যে থাকা কপার থাইরয়েড জনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।

পেয়ারার অপকারিতাঃ  যেকোন ভাল কিছুই আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহার করেন বা গ্রহন করেন তবে তাঁর ফলাফল ভাল থাকেনা। তেমনই অধিক পেয়ারা খেলেও আপনাকে পরতে হবে কিছু সমস্যায় ।

পেট ফাপাঃ  পেয়ারা একটি উচ্চ ফ্রুক্টোজ সমৃধ ফল। আমাদের শরীর অধিক পরিমানে ফুক্ট্রোজ শোষণের জন্য উপুযোগী নয়। তাই অধিক পরিমাণে পেয়ারা খেলে এর খনিজ এই উপাদানটি আমাদের এবং সাথে কিছু ব্যাক্টেরিয়া মিলে পেটে গ্যাস উতপন্ন করে এবং পেট ফাপা অনুভূত হয়।

ডাইরিয়া এবং পেটের পীড়াঃ উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টজ হজম করতে না পারার কারনে অনেক সময় ডাইরিয়া এবং পেটব্যাথা হতে পারে। আর পেয়ার ভিতরের অংশে অনেক বীজ থাকে। এই অংশটি আমাদের পেটে কখনোই ঠিক মত হজম হয়না। তাই অধিক পেয়ারা খেলে পেট ব্যাথা এবং পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সুগার বৃদ্ধিঃ অধিক পেয়ারা খেলে আপনার ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর পাশাপাশি এটিতে কোন প্রোটিন এবং ফ্যাট না থাকায় আপনি পেট ভরে পেয়ারা খেলেও একটু পর দেখবেন আপনার আবার ক্ষুধা পেয়ে যাচ্ছে। কারন শরীরে প্রোটিনের অভাব থেকেই যায়। তাই এভাবে প্রয়োজনের অধিক খাবার গ্রহন যাদের রক্তে সুগারের সমস্যা আছে তাদের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়াঃ অন্যান্য যে কোন ফলের মতো পেয়ারাতেও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামণ হয়। বিশেষ করে যদি পেয়ারার চামড়া ফাটা বা ক্ষতিগ্রস্থ থাকে তবে তাতে ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই পেয়ারা উপরের চামড়া ফেলে দিয়ে খাওয়া বযাক্টেরিয়ার উপদ্রব থেকে রেহাই দিতে পারে।



আর যদি এই লেখাটি আপনার কোনো বন্ধু বা আত্মীয়দের উপকারে লাগে তাহলে নিচের শেয়ার বাটন গুলোতে ক্লিক করে তাদেরকে শেয়ার করুন।

আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন।

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।

সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।