Friday, September 30, 2022

ফোবিয়া` বা ভয় কী? এর থেকে মুক্তির উপায় || phoebia || types of phoebia || phobia || phobias list

 

ভয়ে যেন শরীর ঠান্ডা হয়ে এল, গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল তাঁর, থরথর করে কাঁপতে শুরু করল লোকটা। কিংবা ঘরে ঢুকেই চিৎকার দিয়ে মূর্ছা গেলেন এক গৃহিণী। এই সব ঘটনা আমরা মাঝে মাঝেই দেখে থাকি কিন্তু কি এই ভয়? এর থেকে মুক্তির উপায় বা কী? চলুন সেটাই দেখা যাক।
 সবচেয়ে সাধারণ আট ভীতি দেখা যায় সেগুলি হলো-

১:)মাকড়সা ভীতি :- অনেক মানুষেরই মাকড়সা ভীতি ( arachnophobia) আছে। আশপাশে কোথাও মাকড়সা আছে বা থাকতে পারে এমন মনে হলেই যেকোনো স্থানে যেকোনো সময়ে তারা ভয় পান। এমনকি শুধু মাকড়সার জাল বা মাকড়সার ছবি দেখেও তারা ভীত হয়ে উঠতে পারেন।
২:)সাপ ভীতি :-সাপের ভীতি ( Ophidiophobia ) থেকে সাধারণত একেক জন একেক রকম আচরণ করেন। কারণ একেক জনের ক্ষেত্রে সাপের ভয়ের চিন্তা, সাপের চিত্রকল্প, সাপের চলাফেরা বা নড়াচড়ার শব্দ আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি থেকে এমনটা হতে পারে। সাপের ভীতি থেকে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হতে পারে। সাপের ভয় মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকলে প্রায় অসম্ভব সব জায়গাতেও কেউ কেউ সাপের উপস্থিতি কল্পনা করে ভয় পেতে পারেন।
৩:)উচ্চতা ভীতি :- অনেক বেশি উঁচু জায়গায় উঠে গেলে আমরা অনেকেই ভয় পাই। বিশেষত সেখান থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে বা সেখানে নিরাপত্তা কম থাকলে এটা প্রায় সবারই হয়। তবে, কারও কারও ক্ষেত্রে এটা প্রবল। একে উচ্চতা ভীতি (Acrophobia) বলে। 

৪:)কুকুর ভীতি :- কুকুর ভয় পান এমন কেউ প্রয়োজনে ঘরে বাসে থাকবেন কিন্তু কুকুরের সামনে পড়তে চাইবেন না। বিশেষত সঙ্গে কেউ না থাকলে এই ভয় তাদের মধ্যে বেশি মাত্রায় কাজ করে। কুকুর ভীতি (Cynophobia) অবশ্য একেক জনের একেক রকম হতে পারে। কেউ কেউ কুকুরের ডাক শুনেই ভয়ে কেঁপে উঠতে পারেন।

৫:)বিদ্যুৎ চমক ও বজ্রপাতের ভীতি

৬:)ইনজেকশন ভীতি

৭:)উড়াল ভীতি :- উড়তে ভয় পান অনেকেই। একে উড়াল ভীতি (Pteromerhanophobia) বলা হয়। বিমান, বেলুন বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এই উড়াল ভীতি তৈরি হয়।

৮:)ধুলোময়লা ও জীবাণু ভীতি

ফোবিয়ার শারীরিক লক্ষণ:
 ১. হার্টরেট বেড়ে যাওয়া।
 ২. গলা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া। 
৩. প্রচণ্ড ঘাম। 
৪. বুকে ব্যথা। 
৫. পেশিতে টান, কাঁপুনি। 
৬. বমিবমি ভাব।
 ৭. নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা।
 ৮. পেটে অসুবিধা, ডায়রিয়া। 
৯. মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

ফোবিয়ার মানসিক লক্ষণ:
 ১. অমূলক ভয়ের পরিস্থিতি, বাইরের লোকজন এড়িয়ে চলা। 
২. আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। 
৩. হতাশ লাগা।

 চিকিত্‍সা: বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট এই পদ্ধতিতে ডাক্তার সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, সেডেটিভস দেন রোগীকে। নন-বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্রথমে ডাক্তার কিছু রিল্যাক্সেশন টেকনিক দেখিয়ে দেন রোগীকে। এতে পেশীগুলোর সঞ্চালন সহজ হয়। এর পরের ধাপ হলো সিস্টেমেটিক ডিসেন্সেটাইজেশন। এতে যে পরিস্থিতিকে রোগী ভয় পায়, নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিতভাবে রোগীকে ধাপে ধাপে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি আনা হয়। ধীরে ধীরে রোগী তখন ভয়টা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। এ সব রকমের পদ্ধতিতে পরিবারের সবার সাহায্য খুব দরকার। অনেক সময় বাড়ির লোক, আত্মীয়স্বজন কো-থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করে। 
ভয় বা আতঙ্ক দূর করবেন কীভাবে? ভয় পাওয়ার বিষয়টি মনোচিকিৎসকরা ব্যাখ্যা করেন মানসিক বিষয় হিসেবে। অনেকে আছেন, যাঁরা একা ঘরে ঘুমাতে ভয় পান, ভূতের সিনেমা দেখে ভয় পান কিংবা রাতে ওয়াশরুমে যেতে ভয় পান। এই আতঙ্কের প্রধান কারণ হলো, আপনি মনের মধ্যে ভয়কে পুষে রেখেছেন, যা আপনিই দূর করতে পারেন। আর হ্যাঁ, এর জন্য মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
 

আপনার করণীয়:
১. প্রথমে ভালো করে লক্ষ করুন, কোন বিষয়গুলোতে আপনি ভয় পাচ্ছেন। সেখানে ভয় পাওয়ার মতো কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব আছে কি না। 
২. অনেক সময় কৌতূহলের কারণেও মনের ভয় দূর হয়। আপনি যদি মনের মধ্যে ভয় পুষে রাখেন, তাহলে তা কোনো দিনই দূর হবে না। যে বিষয়টাতে আপনি ভয় পাচ্ছেন, সেই বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠুন। দেখবেন, যখন পুরোটা জেনে যাবেন, তখন আর ভয় কাজ করবে না।
 ৩. ভয় পেলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো না কোনো কাজ করতে থাকুন। কোনোভাবেই চুপচাপ বসে থাকবেন না। কাজের মধ্যে থাকলে ভয়ের কথা আপনি একসময় ভুলে যাবেন। 
৪. প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলুন। এটা আপনার ভয় কাটাতে সাহায্য করবে। 
৫. বই পড়ুন। প্রিয় লেখকের বই আপনার সব ধরনের বিষণ্ণতা, ভয়, আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। 
৬. বেশি করে খান। চট করে পছন্দের খাবারটি তৈরি করে ফেলুন। দেখবেন, এক নিমেষেই আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। আর ভয়, সেটা তো রান্না করতে করতেই ভুলে যাবেন। 
৭. সাধারণ ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করুন। দেখবেন, আপনার ক্লান্তি দূর হবে। মস্তিষ্ক সতেজ মনে হবে। দেখবেন, ভয়ের কারণে আপনার শরীরে যে ভার অনুভব করছেন, তখন সেটা অনেক হালকা মনে হবে। 
৮. প্রার্থনা করুন। প্রার্থনা ধ্যান করার মতো। দেখবেন, মনের ভয় বা আতঙ্ক সহজেই দূর হয়ে যাবে।

0 comments:

Post a Comment