হতাশা আমাদের জীবনে এক অতি সাধারণ ঘটনা, কিন্তু কি এই হতাশা এই হতাশা কোথাথেকে আসে!
আসলে হতাশা কি?
কোনো কিছুর পরিবর্তন না করতে পারা অথবা কোনো অপূর্ণ রয়ে যাওয়া ইচ্ছা থেকে আমাদের মনে বিষন্নতা, ক্ষোভ এর সৃষ্টি হওয়াকে হতাশা নাম দেওয়া হয়েছে।
আমরা অনেক কারনেই হতাশার সম্মুখীন হই। এটা হতে পারে পড়াশোনা নিয়ে, ক্যারিয়ার নিয়ে, পারিবারিক ভাবে, ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে, প্রেম ঘটিত ব্যাপারে ইত্যাদি। আপনার হতাশ হওয়ার পেছনে অনেক জটিল কারণ থাকতে কিন্তু হতাশা ঘিরে ধরা মানেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নয়।
এখন পর্যন্ত যত মানুষ জয়ী হয়েছেন, তার অধিকাংশ মানুষই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। হতাশাগ্রস্ত থেকে উত্তরণের চেষ্টায়ই আজ তারা জয়ী।
পরিস্থিতিভেদে হয়তোবা হতাশার পরিমাণ কম-বেশী হতে পারে তবে হতাশা যে আমাদের সকলের মধ্যেই আছে সেটাও সত্য।
হতাশ হওয়ার কারনগুলোকে খুজে বের করতে হবে আর একবার যদি আমরা এর যথাযথ উৎপত্তিস্থল বের করতে পারি তাহলে হতাশা থেকে বের হয়ে নিজেকে সঠিক পথে নিয়ে আসাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
১। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিনঃ
ব্যর্থতা মানসিকতাকে এমন জায়গায় নিয়ে আসে যখন মানুষ ভাবতে শুরু করে তার মধ্যে কমতি আছে। আমরা যখন আমাদের কাজে একের পর এক ব্যর্থতার শিকার হতে থাকি তখন অবচেতনভাবেই হতাশা, অবসাদে মন ছেয়ে যায়। তাই কোনো কিছু করতে গিয়ে না পারলে সেটাকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখলে চলবে না। এবং সেই ব্যার্থতার মধ্যে থাকা সফলতাকে খুঁজে পেতে হবে।
এইভাবে নিজের দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করতে পারলে বাঁধাবিপত্তি গুলোকে সুযোগে পরিণত করা যায়। ব্যর্থতাকে পাশ কাটিয়ে হতাশা থেকে উত্তরণ পেতে ইচ্ছাশক্তির জোর অবশ্যই থাকতে হবে, আর এভাবে তখনই ভাবতে পারবেন যখন সবকিছু শেষ হয়ে গেছে না ভেবে মাত্রই শুরু করলেন এভাবে ভাবতে পারবেন।
২। অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুনঃ
আমরা এখন একটি প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে বসবাস করছি, যদিও বিষয়টি নতুননা, কিন্তু তারপরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থান এর পর এই প্রতিযোগীতা এমন ভাবে বেড়েছে, যেন আমরা আগুনে ঘি ঢেলেছি।বিশ বছর আগে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সদ্য কেনা গাড়ি অথবা অন্য কোনকিছুর সাথে নিজেদের কাছে থাকা জিনিষের তুলনা করতাম। আর এখন আমরা তুলনা করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা সেলিব্রেটিদের সাথে অথবা পুরোনো বন্ধু বা কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাথে।
কিন্তু যখন আপনি কারনে অকারণে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনলাইন হওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন আপনি অনেক বেশি ভালো বোধ করবেন এবং আপনার অকারন হতাশ থেকেও মুক্তি পাবেন।
৩। বাঁধা-ধরা নিয়ম থেকে বের হয়ে আসুনঃ
আমরা প্রত্যেকেই এই সমস্যাটির সাথে পরিচিত, কিন্তু একদম নিখুতভাবে বের করা খুব কষ্ট যে এই বাঁধা-ধরা নিয়মে চলার ফলে আমাদের হতাশা কোথা থেকে আসছে?
আপনি কি ধরণের জীবন-যাপন করবেন সেটা কোন ব্যপার নয়, শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই-ই একই ধরণের কাজ দিনের পর দিন করতে করতে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ি। আপনি আপনার জীবন নিয়ে স্বভাবতই সুখী হতে পারেন, কিন্তু তারপরেও আপনি কিন্তু একটি জালে আটকা রয়েছেন। আপনি একই গতিতে চলতে চলতে একটি নিয়মে আটকা পড়ে আছেন।
নিত্যদিনের কর্মসূচি আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিক-ই কিন্তু দিনশেষে আমাদেরকে ধীর আর মনের স্ফুর্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। এর মানে এই না যে, আপনি আপনার কাজ ছেড়ে দিবেন, আপনার পরিবার পরিজন ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে বসবাস করবেন। এরকম চিন্তা করলে হতাশা তো ছাড়বেইনা আরো বেশি আকারে বেড়ে যাবে। তাই এমন কিছু করার চেষ্টা করুন যা আপনি সব সময় করতে চেয়েছেন যা আপনি পারেন নি আগে, কারন কথায় আছে- আপনিই পারবেন!
৪। ক্ষমতা পুনরায় অর্জন করুন যদি ভাবেন আপনি ক্ষমতাহীণ হয়ে পড়ছেনঃ
আমরা নিয়ন্ত্রন করতে খুব পছন্দ করি, কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যা আপনি চাইলেও নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবেন না।
নিষ্ঠুর সত্য এই যে, আমরা চাইলেই আমাদের মত করে সব কিছু সাজাতে পারবোনা। কিন্তু যেসব বিষয়ের উপর আমরা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারি বা ট্যালেন্ট দেখাতে পারি সেই কাজগুলো ভালো ভাবে করতে পারলে আমরা অবশ্যই হতাশ হবোনা।
হেরে যাওয়া যুদ্ধে সংগ্রাম না করে পুনরায় নতুন আঙ্গিকে নিজেদের ক্ষমতাকে এমন জায়গায় ব্যবহার করতে হবে যেখানে আমরা সেই বিষয়টিকে আমাদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারি। যেসবের উপর আমাদের হাত নেই সেখানে না চেষ্টা করে এমন কিছু ছোট ছোট বিষয়ের উপর আমরা নজর দিতে পারি যা পরিশেষে আমাদের নিজেদের জন্যেই ভালো কিছু বয়ে আনবে। তখন নিজের উপর বিশ্বাস ফিরে আসতে পারে, যে আপনার ও ভালো কিছু করার ক্ষমতা আছে, আপনি ক্ষমতাহীন নন।
৫। ভয়ের মোকাবিলা করুনঃ
হতাশা ভয়েরই প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ভয় একটি ভীতিকর ব্যপার হতেই পারে কিন্তু এমনও হতে পারে ছোট্ট একটি বিষয়ই আস্তে আস্তে বড় হয়ে গড়ে উঠেছে। এমন হতে পারে শুরুর দিকে এটা খুব ছোট্ট একটা কাজ ছিল, কিন্তু সেটাকে ফেলে রাখতে রাখতে অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে আর এখন অনেক বড় আকার ধারণ করেছে যা এখন ভয় আর হতাশার জন্ম দিয়েছে আপনার মনে।
এর একটাই সমাধান হতে পারে, এখনই এই মুহূর্তে আপনার ভিতরে থাকা ভয়টিকে মোকাবিলা করার। আপনি যেই কাজটি করতে ভয় পাচ্ছেন আজ ই সেটা শুরু করে দিন খুব অল্প পরিসরে, কিন্তু আপনাকে শুরু করতেই হবে তাহলেই আপনার ভেতরে থাকা ভয়টিকে ধীরে ধীরে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবেন এবং নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন ভয়ভীতি আর হতাশার জাল থেকে।
এসব হতাশার মুখোমুখি হতে ভয় পাবেন না। যখন আপনি আপনার সুবিধাজনক স্থান থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন, আপনি সব থেকে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবেন।
0 comments:
Post a Comment