Thursday, September 29, 2022

এলার্জি কি? কেন হয়, মুক্তির উপায় || এলার্জি কেন হয় || এলার্জি দূর করার উপায়

 


 হ্যালো বন্ধুরা । আমাদের জীবন আনন্দ, সুখ দুঃখ হাসি ও কান্নার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এর মধ্যেই রয়েছে রোগ ব্যাধি ও জড়ার উপস্থিতি।
বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যানে বেশিরভাগ রোগই নিরাময় করা সম্পূর্ণ ভাবে সম্ভব, কিন্তু বেশকিছু রোগের চিকিৎসা আজও অজানা !
আমাদের এই লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও তাদের  নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।


এলার্জি কি?

মানুষের শরীরে এক একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম আছে। কোন কারণে এই ইমিউন সিস্টেমে গণ্ডগোল দেখা দিলে এলার্জির বহির্প্রকাশ ঘটে। কখনও কখনও আমাদের শরীর ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই এলার্জি।

এলার্জি কেন হয়?

যদিও এলার্জি একটি বহুল প্রচলিত শব্দ কিন্তু এই এলার্জি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক কোন ধারণা নেই। শ্বাস কষ্ট, এক্জিমা ইত্যাদি বহু চর্মরোগেরই কারণ এলার্জি।

নিম্নলিখিত বিভিন্ন কারনে এলার্জি হতে পারেঃ

১: ঘরের জমানো ধুলো হাপানি জনিত এলার্জির জন্য একটি অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলোতে মাইট নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবানু থাকে যা শতকরা প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী।

২: দুষিত বাতাস, ঘরের ধুলো, ফুলের পরাগ, ধোয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুনকাম, পুরানো ফাইলের ধুলো ইত্যাদি দেহে এলার্জিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে হাপানি রোগের সৃষ্টি করতে পারে। ছত্রাক এলার্জি তথা হাপানি সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।

৩: খাদ্যে প্রচুর এলার্জির সম্ভাবনা থাকে যেমন- দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে খুব বেশি এলার্জি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে গায়ে চুলকানি, হাপানি ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়াও মাছ, বাদাম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, ব্যাঙের ছাতা, গম, ডিম, তরমুজ, পেয়াজ, রসুন, চকোলেট এমনকি ঠান্ডা পানীয়ও কোন কোন ব্যক্তির এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

৪: শিশুকে টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়ার পর অনেক সময় চুলকানি বা ঠান্ডাজনিত কোন সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

৫: মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল প্রভৃতি পতঙ্গের কামড়ে গায়ে চুলকানি, স্থানটি ফুলে যাওয়া এমনকি হাপানি পর্যন্তও হতে দেখা যায়। এছাড়াও শরীরে পশম বা পালক আছে এমন গৃহপালিত পশু যেমন- বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি এবং গৃহপালিত পাখিও অনেক সময় এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া আর্টিকোরিয়া (আমবাত) নামক একটি চর্মরোগে ত্বকে চাকা চাকা হয়, ফুলে ওঠে এবং চুলকানি হয়। অধিকাংশ মানুষের জীবনের কোন না কোন সময় এই রোগটি হয়ে থাকে। এই আর্টিকোরিয়া শরীরের কোন নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে আবার সমস্ত শরীরে ছড়িয়েও পড়তে পারে। এ ধরনের এলার্জিতে প্রচন্ড চুলকানির সাথে বিভিন্ন আকারের লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে পারে। নানান কারন এটা হতে পারে যেমন- খাদ্য এলার্জি থেকে (বাদাম, ডাল, মাংস, ডিম), পতঙ্গের কামড়ে (বোলতা, মৌমাছি, ভীমরুল, মাকড়সা) ইত্যাদি কারনে এটা হতে পারে।

৬: প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা

৭: রক্ত পরীক্ষা (রক্তে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কিনা তা নির্ণয়)।

৮: সিরাম আইজিইর মাত্রা (সাধারণত এলার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে মাত্রা বেশি হয়)।

৯: স্কিন প্র্রিক টেস্ট (এ পরীক্ষায় রোগীর চামড়ায় বিভিন্ন এলার্জেন দিয়ে এ পরীক্ষা করা হয় এবং এ পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর এলার্জি আছে তা নির্ণয় করা হয়)।

১০: বুকের এক্স-রে (হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে করে বোঝা যায়, অন্য কোনো কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা)।

১১: স্পাইরোমেট্রি (এ পরীক্ষায় রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়)।


এলার্জির চিকিৎসা:

যদি এলার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, তখন তা পরিহার করার মাধ্যমে সহজেই এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এলার্জি ভেদে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে এলার্জি উপশম করা যায়।

এলার্জি দ্রব্য থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন নেয়ার মাধ্যমে সহজেই এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

এ পদ্ধতির ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার কমে যায় এবং কর্টিকোস্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। এটাই এলার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। 

অনেকের ধারণা এলার্জি একবার হলে আর সারবে না কিন্তু প্রথমদিকে ধরা পড়লে এলার্জিজনিত রোগ একেবারেই সারিয়ে ফেলা সম্ভব। অপরদিকে অবহেলা করলে এবং রোগ দীর্ঘসময় ধরে থাকলে চিকিৎসা একটু কঠিন হতে পারে।

এলার্জি জাতীয় খাবার: 

কোন খাবারে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হলে, সেই খাবারটি দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হবে। তারপর পুনরায় খাওয়া শুরু করে দেখতে হবে। যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয় তবে খাওয়া চালিয়ে যেতে পারেন কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে খাবারটি বন্ধ করে দিতে হবে।

খাবারে অ্যালার্জির কারণে বেশ কিছু সমস্যা যেমন- বমি, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। 

কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি আছে তা খুঁজে বের করে সে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।  খাবারের বেলায় ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়তে ভিটামিন-ই খুবই কার্যকর।
 গাজর কিংবা শসার রসেও প্রচুর অ্যালার্জি প্রতিরোধী উপাদান আছে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা বেশি আছে, তাঁদের অ্যালকোহল, চা এবং কফি না পান করাই ভাল।

এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়:

● প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার করার সময় কিছু ময়লা বইয়ের সেলফে জমে থাকে এবং জমে থাকা ময়লা অ্যালার্জেন সৃষ্টি করে। দু-এক দিন পর পর বইগুলো নাড়াচাড়া করলে সেলফে থাকা ডাস্ট চলে যাবে।

● বিছানার ডাস্ট মাইট থেকে পরিত্রাণ পেতে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ইত্যাদি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এছাড়া ঘরের চারপাশে মেঝে ভালভাবে জল ও ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন উঠোনে বা বেলকনিতে আসা রোদে লেপ, কম্পল ইত্যাদি ভালভাবে শুকিয়ে নেয়া যেতে পারে কারন রোদের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিতে হাউজ ডাস্ট মাইট মরে যায়।

● এক সপ্তাহ পর পর ভেজা কাপড় দিয়ে দরজা এবং জানালা পরিষ্কার করা উচিত। সেইসঙ্গে দরজা এবং জানালার পর্দা মাঝে মধ্যে ভালভাবে ধুতে হবে।

● রান্না ঘরের ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত হতে প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। ফ্লোর ক্লিনার ও গরম জল দিয়ে রান্না ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

● শিশুদের খেলনা, বিভিন্ন শোপিস, জুতা, ফ্যান, এসি, ঝাড়বাতি ইত্যাদিতে ধুলোবালি জমে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই নিয়মিত এসব পরিষ্কার করতে হবে।

● বাসায় পশুপাখি থাকলে প্রতিদিন স্বান করাতে হবে। পশুপাখি যে জায়গায় থাকে সেই জায়গাটা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। অবশ্যই খাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে দিতে হবে। 

তাহলে আজকের জন্য এইটুকুই , এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মধ্যে share করতে ভুলবেন না।
 আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন। 

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।

সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।

0 comments:

Post a Comment