হ্যালো বন্ধুরা । আমাদের জীবন আনন্দ, সুখ দুঃখ হাসি ও কান্নার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এর মধ্যেই রয়েছে রোগ ব্যাধি ও জড়ার উপস্থিতি।
বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যানে বেশিরভাগ রোগই নিরাময় করা সম্পূর্ণ ভাবে সম্ভব, কিন্তু বেশকিছু রোগের চিকিৎসা আজও অজানা !
আমাদের এই লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও তাদের নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ডিপ্রেশন কী?
ডিপ্রেশন খুবই কমন কিন্তু মারাত্মক একধরণের মানসিক ব্যাধি যা আপনার অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা ও কাজকর্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা অনেক সময় দুঃখবোধ(Sadness)ও বিষণ্ণতাকে(Depression)এক বলে মনে করি। এ দুটো কিন্তু এক নয়। দুঃখবোধ হলো সাময়িক মন খারাপ যা অল্প কিছু সময় পরেই ঠিক হয়ে যায়। এর জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, ডিপ্রেশন দীর্ঘকালীন সমস্যা। যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ও পরামর্শের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
ডিপ্রেশন কাদের হয়?
যেকোনো দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ লোক বিষণ্ণতা রোগে ভুগে থাকে। মেয়েদের এ রোগে ভোগার প্রবণতা পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ। বেকার ও নিঃস্ব জীবন যাপনকারীরাও (বৃদ্ধ, স্বামী পরিত্যক্ত স্ত্রী) এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন। যারা বিভিন্ন ধরনের নেশা করে তাদের মধ্যেও ডিপ্রেশনের হার বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে সাধারণত এ রোগ বেশি হয়। আগে একটি ধারণা ছিল, সাধারণত বয়স্কদের এ রোগ হয়। কিন্তু এ ধারণা বোধ হয় এখন আর টিকছে না। আধুনিক নাগরিক জীবনের চাপ সব হিসাব ওলট-পালট করে দিচ্ছে।
কেন হয় ডিপ্রেশন?
ডিপ্রেশন একটি জটিল রোগ। কেন এ রোগ হয় নির্দিষ্ট করে কারো পক্ষেই তা বলা সম্ভব না। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই কিছু কমন কারণ থাকে যার জন্য এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
১. অপমানবোধঃ মানসিক বা শারীরিকভাবে অবমাননার স্বীকার হলে অনেকে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়।
২. নিরাপত্তাহীনতা বা একাকীত্বঃসামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে বিষণ্নতার স্বীকার হয়। তাছাড়া, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব বা অন্যান্য কাছের মানুষদের সাথে সম্পর্কহীনতা বা মতবিরোধ থেকেও অনেকে বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে।
৩. মৃত্যুশোকঃ কাছের মানুষের মৃত্যু অনেকের ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. বংশগত প্রভাবঃ পরিবারে কারো ডিপ্রেশন থাকলে তা অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
৫. জীবন পদ্ধতিতে বড় ধরণের পরিবর্তনঃ
জীবনে বড় কোন পরিবর্তন ঘটলে তা থেকে অনেকে বিষণ্ণতায় ভুগে। চাকরি হারালে, অবসরে গেলে, আয় কমে গেলে, জায়গা পরিবর্তন করলে, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, এমনকি, নতুন বিয়ে করলেও অনেকে ডিপ্রেশনের শিকার হয়।
৬. বড় কোন রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
বড় ধরণের কোন রোগ থাকলে রোগী ডিপ্রেশনের শিকার হতে পারে।
৭. ঔষধের প্রভাবঃ
নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ সেবনের ফলেও কেউ কেউ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। যেমন, ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসোট্রেটিনিয়ন বা অ্যান্টিভাইরাল “ইন্টারফেরন-আলফা” জাতীয় ঔষধ সেবনেও অনেকে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। ব্যক্তিভেদে বিষণ্ণতার কারণে পার্থক্য দেখা যায়।
ডিপ্রেশনের লক্ষণ কি?
১। মনে অশান্তি, কষ্ট, মন খালি খালি লাগা ও দুশ্চিন্তাবোধ।
২। নেতিবাচক মনোভাব, সব কিছুতে হতাশা ও নিজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই ভাবা।
৩। উৎসাহহীনতা।
৪। আনন্দদায়ক কাজে আনন্দ না থাকা।
৫। নিজেকে অপরাধী ভাবা।
৬। কাজকর্মে, চলাফেরায় ধীর হয়ে যাওয়া।
৭। মৃত্যুর চিন্তাভাবনা, আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা (এমনকি অনেকে এ রোগে আত্মহত্যাও করে বসে)।
৮। মনোযোগহীনতা, বিরক্তি ভাব।
৯। আত্মবিশ্বাসের অভাব।
১০। স্মরণ শক্তির সমস্যা।
১১। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।
১২। শরীর ও মাথাব্যথা।
১৩। ঘুমের সমস্যা।
১৪। খাওয়ায় অরুচি।
১৫। সেক্স সম্বন্ধে উৎসাহ কমে যাওয়া।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য কি কি সহায়ক হতে পারে?
১. রুটিনমাফিক চলাঃ
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিনের জীবনকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিনের কাজ-কর্মকে যদি একটা নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায় তবে তা ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
২. লক্ষ্য নিয়ে কাজ করাঃ
লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ডিপ্রেশনে যেহেতু কোন কাজ করতে ইচ্ছা করে না তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
ধরা যাক, প্রথম দিন আপনি ঠিক করলেন আপনি আজ একটা মজার কিছু রান্না করবেন। যদি আপনি সেই কাজটা ঠিক মত করতে পারেন তবে পরের দিন আর একটু বেশি কিছু করার কথা চিন্তা করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাজের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে এক সময় ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ
প্রতিদিন অল্প কিছু সময় ব্যায়াম করলে তা আপনার শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখবে। ব্যায়াম করা মানে, ম্যারাথন দৌড় টাইপ কিছু না, আপনি যদি প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাটি করেন তবুও তা আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা আপনাকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
৪. সুষম খাদ্য গ্রহণঃ
সুষম খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মেলে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ থাকে। সাইক্রায়াটিস্টদের মতে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড এবং ফলিক এসিড থাকে সেসব খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সহায়তা করে।
৫. অনিদ্রা দূর করাঃ
পর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন কমায়। ডিপ্রেশনের রোগীদের নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়্। তাই, প্রথমেই ঘুম সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে নিদ্রাহীনতা দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনের বেলার হালকা ঘুমের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। শোবার ঘর থেকে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। এভাবেই অনিদ্রা রোগ ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব।
৬. ইতিবাচক চিন্তা করাঃ
ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলে মানুষের মনে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। যেমন, আমিই বুঝি সবচেয়ে খারাপ, আমার মত দুঃখ কারো নেই, আমি সবার চেয়ে অসুস্থ, আমি ব্যর্থ একজন মানুষ- এই ধরণের চিন্তাগুলো সুস্থ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই, এই নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে মন থেকে দূর করে পজিটিভলি চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে হবে। আশাহত হওয়া যাবে না কোনভাবেই।
৭. আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানোঃ
নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মজার কোন কাজ। যেমন, নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার কোন বই পড়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। মন ভালো রাখার সবরকম চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো থাকলে ডিপ্রেশন কেটে যাবে একসময়।
8. ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণঃ
ডিপ্রেশন পুরোপুরি না ভালো হওয়া পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
আর যদি এই লেখাটি আপনার কোনো বন্ধু বা আত্মীয়দের উপকারে লাগে তাহলে নিচের শেয়ার বাটন গুলোতে ক্লিক করে তাদেরকে শেয়ার করুন।
আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন।
আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।
সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।
0 comments:
Post a Comment