Friday, September 30, 2022

রাতকানা কি? রোগলক্ষন ও প্রতিকার ||রাতকানা || রাতকানা রোগ কি || রাতকানা রোগ কেন হয়

 


হ্যালো বন্ধুরা । আমাদের জীবন আনন্দ, সুখ দুঃখ হাসি ও কান্নার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এর মধ্যেই রয়েছে রোগ ব্যাধি ও জড়ার উপস্থিতি।
বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যানে বেশিরভাগ রোগই নিরাময় করা সম্পূর্ণ ভাবে সম্ভব, কিন্তু বেশকিছু রোগের চিকিৎসা আজও অজানা !
আমাদের এই লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও তাদের  নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।

রাতকানা কি? 

রাতকানা হচ্ছে ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত রোগ (জেরোফথালমিয়া) এর প্রথম পর্যায়৷ প্রধানত ভিটামিন-এ এর অভাবে বাচ্চাদের এই রোগ হয়ে থাকে৷ এর ফলে রোগী দিনে স্বাভাবিক দেখবে কিন্তু রাতে বা অল্প আলোতে প্রথম প্রথম ঝাপসা বা হালকা দেখলেও পরে দেখতে পায় না৷ আমাদের দেশে ৬ বছরের কম বয়েসী শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগ বেশি দেখা যায়৷ অথচ আমরা একটু সচেতন হলেই এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি৷

কারণ:

১  খাবারে ভিটামিন এ-এর অভাব৷

   বাচ্চা অল্প ওজনে জণ্ম হলে এবং অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর এই রোগ বেশি হয়৷

  ডায়রিয়া, হাম, নিউমোনিয়া ইত্যাদি হলে শরীরে ভিটামিনের অভাব হয়৷

 বাড়ন্ত বয়সে অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে না পারলে এই রোগ হতে পারে৷

লক্ষণ:

   প্রথমে ভোরে ও সন্ধ্যায় অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধে হয়, একে রাতকানা বলে৷

 পরে তার চোখ শুকিয়ে যায় (জেরোসিস), চোখের সাদা অংশের চকচকে ভাবটা চলে গিয়ে সেটা কুঁচকিয়ে যায়৷

 চোখে ছোট ছোট ছাই রঙের বুদবুদ ভর্তি দাগ (বিটট্স  স্পট) দেখা দেয়৷

  এরপর চোখের কর্নিয়া নরম হয়ে যায়৷

    কর্নিয়াতে ঘা হয়৷ কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়৷ নরম কর্নিয়া ঠেলে ফোঁড়ার মতো বেরিয়ে আসতে পারে বা ফুটো হয়ে যেতে পারে৷

  অবশেষে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়৷

চিকিৎসা:

রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুকে (১ বছরের বেশি বয়স) তিনটি ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷ ক্যাপসুল খাওয়ানোর নিয়ম হল প্রথম দিন একটি, দ্বিতীয় দিনে একটি এবং দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিন পর একটি খাওয়াতে হয়৷ তবে এক বছরের কম বয়সী শিশুরা একই নিয়মে অর্ধেক ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাবে অর্থাৎ প্রতিবারে চার ফোঁটা৷ কারণ একটি ক্যাপসুলে মোট আট ফোঁটা ওষুধ থাকে৷ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

২. রাতকানা প্রতিরোধে কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা যায়?

একটু সতর্ক ও সচেতন থাকলেই রাতকানা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

প্রতিরোধ:

  বাচ্চাকে প্রথম ৫ মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে৷ বুকের দুধ শিশুকে রাতকানা হওয়া থেকে রক্ষা করে৷ বুকের দুধ সম্ভব হলে শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত খাওয়াতে হবে৷

   বাচ্চা হবার দুই সপ্তাহ পর মাকে ২ লক্ষ আই.ইউ. ভিটামিন-এ এর ১ ডোজ খাওয়াতে হবে৷

  শিশুকে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার (হলুদ ফলমূল ও শাক-সবজি, ডিম/দুধ/কলিজা, মাছ, মাংস,) খাওয়াতে হবে৷

    ৬ মাস বয়স থেকে শুরু করে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি ৬ মাস অন্তর উচ্চ মাত্রার ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷

   অপুষ্টি রোধ করতে হবে৷

    বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগলে, হাম, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার পাশাপাশি ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷

   চোখের কালো অংশে কোনও পরিবর্তন (যেমন- ধোঁয়াটে, ঘোলা, ছিদ্র, সাদা হওয়া) দেখা দিলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে৷

পরামর্শ:

   প্রতিদিন ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন-

  গার সবুজ শাক যেমন- কচু-শাক, পুঁইশাক, পালংশাক, মূলা-শাক ইত্যাদি৷

  হলুদ সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়া, গাজর ইত্যাদি৷

হলুদ ফল যেমন- পাকা কাঁঠাল, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি৷

 প্রাণী জাতীয় খাদ্য বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন- দুধ, ডিমের কুসুম, কলিজা, ছোট মাছ ইত্যাদি৷

শাক-সবজি অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে৷ তেল দিয়ে রান্না করে খেলে ভিটামিন-এ বেশি পাওয়া যায়৷ এ ছাড়া ৬ মাস বয়স থেকে শুরু করে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুকে ৬ মাস পর পর একটি করে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷ ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর মাত্রা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খেতে দেয়া বিপদজনক৷ এতে করে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷

তাহলে আজকের জন্য এইটুকুই , এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মধ্যে share করতে ভুলবেন না।
 আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন। 

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।

সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।

0 comments:

Post a Comment