Friday, September 30, 2022

ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার (ভুলে যাওয়ার রোগ) প্রতিরোধ

 


হ্যালো বন্ধুরা । আমাদের জীবন আনন্দ, সুখ দুঃখ হাসি ও কান্নার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ এর মধ্যেই রয়েছে রোগ ব্যাধি ও জড়ার উপস্থিতি।
বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যানে বেশিরভাগ রোগই নিরাময় করা সম্পূর্ণ ভাবে সম্ভব, কিন্তু বেশকিছু রোগের চিকিৎসা আজও অজানা !
আমাদের এই লেখার মাধ্যমে আমরা আপনাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও তাদের  নিরাময় করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার (ভুলে যাওয়ার রোগ) রোগলক্ষন ও তার প্রতিকার :

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন। যেমন- পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হলে তার নাম মনে করতে না পারা, কোন জরুরি কথা বা জরুরি ফোন নাম্বার মনে করতে না পারা এমনকি চশমা কোথায় রেখেছেন তাও অনেক ক্ষেত্রে মনে থাকে না। এটি হচ্ছে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া। ডিমেনশিয়া শব্দটি ল্যাটিন শব্দ dementare থেকে এসেছে, যার অর্থ পাগল করে দেওয়া।

ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব ক্রমান্বয়ে লোপ পায় এবং বাড়তে থাকে। সাধারণত, প্রবীণদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি দেখা যায় এবং হঠাৎ করে অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না।
ফলে তার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং শরীরের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেললে হৃদরোগ ঠেকানোর পাশাপাশি আলঝাইমার রোগও ঠেকানো সম্ভব।


ডিমেনশিয়া রোগের কারণ:

বিভিন্ন রোগের কারনে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ হতে পারে। যেমন- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এইডস, থাইরয়েডের সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদী ধূমপান বা মদ্যপান, আলঝেইমার, শরীরে ভিটামিন বা খনিজ উপাদানের ঘাটতি, ভিটামিন বি’এর অভাব, কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া এবং মস্তিষ্কের নানান রোগ ইত্যাদি।

ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ প্রতিরোধে করনীয়:

নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক ব্যয়াম, খাবার গ্রহনে সচেতন হলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবেঃ

১:) সবার সাথে মিশতে হবে, অন্যদের খোঁজখবর রাখা এবং নানান রকম সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

২:) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে হবে।

৩:) নানা রকম বৈচিত্র্যময় কাজে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। 
যেমন- অবসরে পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা বই পড়া, আবার বুদ্ধির খেলা যেমন- শব্দভেদ (ক্রসওয়ার্ড পাজল) মেলানো, দাবা খেলা, ধাঁধার সমাধান ইত্যাদি অথবা যেকোনো সৃজনশীল কাজের চর্চায় স্মৃতিশক্তি বাড়বে।

আরো যেসব ব্যাবস্থা নেওয়া যেতে পারে তা হলো :

●বেশি করে তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

●সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কমাতে হবে। মাছের তেল মস্তিস্কের জন্য বেশ উপকারী।

●প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

● রক্তচাপ, ব্লাড সুগার ও চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

● ধূমপান, মদ্যপান কিংবা যেকোনো তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করতে হবে।

ডিমেনশিয়া রোগের লক্ষণ: 

ভুলে যাওয়ার কারণে রোগীর মধ্যে হতাশা কাজ করে। প্রাথমিকভাবে ডিমেনশিয়া খুবই ধীরে বিস্তার লাভ করে, কয়েক মাস এমনকি বছরও হতে পারে। এছাড়াও নিদ্রাহীনতা এবং আরও অন্যান্য সমস্যায় ভুগতে পারে। ধীরে ধীরে রোগী অন্যের ওপর নির্ভ্রশীল হয়ে পড়ে।


চিকিৎসা 

লক্ষণ দেখে সন্দেহ হলে অথবা ডিমেনশিয়া রোগটি শনাক্ত হওয়ার পর, দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
রোগীকে সময় দেয়া, যথাযথ সম্মান করা, সেবা করা সর্বোপরি প্রত্যহিক জীবনের মান বাড়ানোর মাধ্যমে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির হার কমানো যায়।

আবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু কিছু ওষুধ যেমন- donepezil, nemantidine, tacrine ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। এগুলো রোগীর চিন্তাশীলতা ও শনাক্তকরণ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগটি সেরে উঠার সম্ভাবনা থাকলেও, জটিল হয়ে গেলে রোগীর আর সেরে ওঠার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

ডিমেনশিয়ার সচেতনতা:

আমাদের সবার ধারনা, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভুলে যাবেন। এটিকে আমরা অনেকেই খুব স্বাভাবিকভাবে নেই এবং ডিমেনশিয়া যে একটি রোগ, এ বিষয়ে সচেতন থাকি না। এখন এমন অনেক ওষুধ আছে, যেগুলো সেবনে ডিমেনশিয়া রোগটির তীব্র হওয়া ঠেকানো যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আসলে এটি সম্ভব কিন্তু বেশির ভাগ রোগীই আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। সচেতনতা বৃদ্ধি করে ডিমেনশিয়ার উৎপত্তি থেকে কিছুটা নিরাপদে থাকা যায়। ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ডিমেনশিয়া সচেতনতা দিবস। ডিমেনশিয়া রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

কম বয়সেও ডিমেনশিয়া রোগ হতে পারে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি কিছুটা হ্রাস পাবে এটাই স্বাভাবিক। আবার অনেক পরিচিত মানুষ, সুন্দর কিছু মুহূর্ত এবং জীবনের কিছু ঘটনা মনের পাতায় দাগ কেটে থাকবে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু যদি জীবনের মধুর স্মৃতিগুলো মন থেকে মুছে যাচ্ছে অথবা সাম্প্রতিককালের কোন ঘটনা মনে করতে পারছেন না অথবা অনেক চেনা জানা কোন ব্যক্তির কথা অনেক চেষ্টা করেও মনে আসছে না, তখন বুঝতে হবে আপনি ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত। ডিমেনশিয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বর্তমান সময়ে তরুণদের ডিমেনশিয়া রোগের হার ব্যাপকহারে বাড়ছে।

ডিমেনশিয়া রোগের এই প্রবণতা যদি এই হারে বাড়তে থাকে তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সাধারণত ডিমেনশিয়া শুরু হয় বয়স ৭০ এর কোটায় পৌঁছালে। আর কম বয়সে ডিমেনশিয়া শুরু হয় বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। বড়দের ডিমেনশিয়া হলে সাধারণত স্মৃতিশক্তি সমস্যাই বেশি হয়। অপরদিকে কম বয়সে ডিমেনশিয়া হলে সাধারনত ল্যাংগুয়েজ সমস্যাই অধিক হয়। কম বয়সে ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা অনেক বেশি দরকার পড়ে।


তাহলে আজকের জন্য এইটুকুই , এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মধ্যে share করতে ভুলবেন না।
 আমাদের পরবর্তী লেখাগুলোর নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ঘন্টার মতো দেখতে বাটনটিতে ক্লিক করুন। 

আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন। আমাদের টিম তার উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করবে।

সবশেষে ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।


0 comments:

Post a Comment